তবে এই নির্ভরতার কারণে অনেক সময় প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। যদি জমি মাপার ব্যাসিক ধারণা আমাদের জানা থাকে, তাহলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। তাছাড়া, জমি পরিমাপ জানা থাকলে জমি কেনার সময় জমির সঠিক পরিমাণ নিজেই যাচাই করে নেওয়া যায়।
এই আর্টিকেলে জমি মাপার বিভিন্ন সূত্র এবং নিয়ম সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যা আপনাকে জমি মাপার বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা দেবে।
জমি পরিমাপের সাথে সংশ্লিষ্ট এককসমূহ:
জমির পরিমাপ বিভিন্ন এককে প্রকাশ করা হয়। বিভিন্ন অঞ্চলে এককের পার্থক্য দেখা গেলেও নিচে সাধারণত ব্যবহৃত এককগুলোর বিবরণ দেওয়া হলো:
-
১ শতাংশ = ১০০০ বর্গলিংক
-
১ শতাংশ = ৪৩৫.৬০ বর্গফুট
-
১ শতাংশ = ১৯৩.৬০ বর্গহাত
-
১ শতাংশ = ৪৮.৪০ বর্গগজ
-
১ শতাংশ = ৪০.৪৭ বর্গমিটার
-
১ কাঠা = ১.৭৫ শতক (৩৫ এর মাপে)
-
১ কাঠা = ১.৬৫ শতক (৩৩ এর মাপে)
-
১ কাঠা = ১.৫০ শতক (৩০ এর মাপে)
-
১ একর = ৬০.৬০ কাঠা
-
১ একর = ৩.০৩ বিঘা
-
১ হেক্টর = ২.৪৭ একর
-
১ একর = ৪৩,৫৬০ বর্গফুট
-
১ একর = ৪৮৪০ বর্গগজ
-
১ একর = ৪০৪৬ বর্গমিটার
-
১ একর = ১৯৪৬০ বর্গহাত
-
১ একর = ১০০০০০ বর্গলিংক
জমি পরিমাপের সহজ সূত্র ও হিসাব:
১. জমির ক্ষেত্রফল বের করার সূত্র
যদি জমির দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ জানা থাকে, তাহলে জমির ক্ষেত্রফল সহজেই বের করা যায়:
ক্ষেত্রফল (বর্গফুট) = দৈর্ঘ্য (ফুট) × প্রস্থ (ফুট)
যদি জমি আয়তাকার বা বর্গাকার না হয়, তাহলে বিভিন্ন বিন্দুর দূরত্ব পরিমাপ করে গড় করে নিতে হবে।
২. জমি মাপার বাস্তব উদাহরণ:
একটি জমির দৈর্ঘ্য:
-
উত্তর দিক = ৫০ ফুট
-
দক্ষিণ দিক = ৫৪ ফুট
জমিটির প্রস্থ:
-
পশ্চিম দিক = ৩০ ফুট
-
ভিতরের এক অংশ = ৩৪ ফুট
-
ভিতরের আরেক অংশ = ৩৮ ফুট
-
পূর্ব দিক = ৪০ ফুট
ধাপ ১: গড় দৈর্ঘ্য নির্ণয়
দুই দিকের দৈর্ঘ্য যোগ করে ২ দিয়ে ভাগ করতে হবে:
(৫০ + ৫৪) ÷ ২ = ৫২ ফুট
ধাপ ২: গড় প্রস্থ নির্ণয়
(৩০ + ৩৪ + ৩৮ + ৪০) ÷ ৪ = ৩৫.৫ ফুট
ধাপ ৩: ক্ষেত্রফল নির্ণয়
৫২ × ৩৫.৫ = ১৮৪৬ বর্গফুট
ধাপ ৪: শতাংশ নির্ণয়
১ শতাংশ = ৪৩৫.৬০ বর্গফুট
১৮৪৬ ÷ ৪৩৫.৬০ = ৪.২৪ শতাংশ
জমি পরিমাপের সহজ যন্ত্রপাতি ও পদ্ধতি:
১. গান্টার চেইন (Gunter’s Chain) পদ্ধতি:
-
ইংরেজ বিজ্ঞানী গান্টার জরিপ কাজে ব্যবহৃত একটি বিশেষ ধরনের চেইন আবিষ্কার করেন, যা "গান্টার চেইন" নামে পরিচিত।
-
এর দৈর্ঘ্য ৬৬ ফুট বা ২২ গজ।
-
এতে ১০০টি লিংক থাকে।
-
প্রতিটি লিংকের দৈর্ঘ্য ৭.৯২ ইঞ্চি।
২. টেপ বা ফিতা ব্যবহার:
-
আধুনিক সময়ে টেপ ব্যবহার করে জমি মাপা বেশ জনপ্রিয়।
-
সাধারণভাবে ব্যবহৃত হয় ৩০ ফুট, ৫০ ফুট, ১০০ ফুট এবং ২০০ ফুট দীর্ঘ টেপ।
৩. ডিজিটাল জমি পরিমাপ পদ্ধতি:
-
বর্তমানে লেজার মিটার এবং GPS প্রযুক্তি ব্যবহার করে জমি পরিমাপ করা যায়।
-
লেজার মিটার দিয়ে নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে দূরত্ব নির্ণয় করা সহজ হয়।
-
GPS ভিত্তিক অ্যাপ এবং ডিভাইসের সাহায্যে জমির মানচিত্র তৈরি করা যায়।
জমির কাগজপত্র ও পরিপূর্ণতা:
১. পরচা:
-
জমির মালিকানা প্রমাণ করার গুরুত্বপূর্ণ দলিল।
-
মৌজা ম্যাপ অনুযায়ী জমির দাগ নম্বর ও পরিমাণ উল্লেখ থাকে।
২. দাখিলা:
-
খাজনা প্রদান করার পর সরকার থেকে দেওয়া রসিদ।
৩. জমাবন্দি:
-
জমির মালিকানার ক্রম অনুযায়ী নাম অন্তর্ভুক্তির নথি।
৪. দাগ নাম্বার ও ছুটদাগ:
-
জমির সুনির্দিষ্ট সীমানা নির্ধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
উপসংহার:
জমি পরিমাপ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকলে জমি কেনা-বেচায় প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। সঠিক পরিমাপ পদ্ধতি এবং নির্ভরযোগ্য যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে জমির হিসাব করা যায়। তাই জমির একক, মাপার পদ্ধতি এবং কাগজপত্র সম্পর্কে জানা প্রতিটি জমির ক্রেতা ও মালিকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।