close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

জমি দখল করে ফেঁসে যাচ্ছেন ইলিয়াস মোল্লা দুদকের প্রতিবেদন..

Md Faysal avatar   
Md Faysal
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ঢাকা-১৬ আসনের সাবেক এমপি ও মিরপুরে অবৈধ দখলের গডফাদার হিসেবে পরিচিত ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লার বিরুদ্ধে মামলা করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ‘তিনি ব্যাপক অনিয়ম..

জমি দখল করে ফেঁসে যাচ্ছেন ইলিয়াস মোল্লা

দুদকের প্রতিবেদন

 

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ঢাকা-১৬ আসনের সাবেক এমপি ও মিরপুরে অবৈধ দখলের গডফাদার হিসেবে পরিচিত ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লার বিরুদ্ধে মামলা করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ‘তিনি ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে মিরপুরের ঝিলপাড় বস্তি ও ৭০০ একর সরকারি খাসজমি দখল করে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।’ কমিশনের উপপরিচালক মো. মোজাম্মিল হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল এ অভিযোগ অনুসন্ধান করছে। সম্প্রতি তারা মামলার সুপারিশসহ আংশিক অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করেছে।

 

দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা মিরপুর পল্লবীর ঝিলপাড় এলাকার মারুল ও সেনপাড়া পর্বতা মৌজায় গৃহায়ন ও গণপূর্তের সাত একর জমি দখল করেছেন। গত ২১ জানুয়ারি ওই বস্তিটি উচ্ছেদ করে অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে।

 

২০০৮ থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ওই জমি ইলিয়াস মোল্লা ও তার অনুচরদের দখলে ছিল। সেখানে ৬৫০ থেকে ৭০০ টিনশেড ঘর করে সমসংখ্যক পরিবারকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। সেসব ঘরের প্রতিটি থেকে মাসে কমপক্ষে ৩ হাজার টাকা করে ভাড়া তোলা হতো। সেখানে বসবাসকারীরা দুদকের প্রতিনিধিদলের কাছে লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন। বক্তব্যে তারা বলেছেন, ‘ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা সরকারি জমি অবৈধভাবে দখল করে টিনশেড ঘর তৈরি করে ভাড়া দেন। ফজলু ও সালমান মোল্লার নেতৃত্বে ইলিয়াস মোল্লার লোকজন প্রতি মাসে সেখান থেকে ভাড়া আদায় করতেন।’

 

দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৬৫০টি ঘর থেকে ৩ হাজার টাকা করে মাসে ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও বছরে ২৩৪ কোটি টাকা ভাড়া অবৈধভাবে আদায় করতেন। সে হিসাবে ১৬ বছরে তারা ৩৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন। এই অবৈধ আয়ের জন্য তার বিরুদ্ধে একটি মামলার সুপারিশ করেছে কমিশন।

 

ইলিয়াস মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়েছে, দুয়ারীপাড়ায় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ৪৭৩টি প্লটসহ প্রায় ২৬ একর জমি ২৮ বছর আগে দখল করেছিলেন তিনি। ঢাকা চিড়িয়াখানার নামে বরাদ্দ হওয়া প্রায় দুই একর জমি দখল এবং মিরপুর ২ নম্বরে তুরাগ নদের অংশ ভরাট করে কয়েকশ বস্তিঘর তুলে ভাড়া দেন তিনি। ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা মিরপুর সাড়ে ১১-সংলগ্ন দুয়ারীপাড়ার ৪৭৩টি প্লট ১৯৮১ সালে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ সরকারি কর্মচারীদের বরাদ্দ দেন। কিন্তু ওই জমি ওয়াক্ফ এস্টেটের দাবি করে দখলে নেন ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা। দুয়ারীপাড়া কাঁচাবাজার সড়কের দুপাশে কয়েকশ দোকানের নিয়ন্ত্রণও ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লার লোকজনের হাতে।’

 

এ ছাড়া ইলিয়াস মোল্লা মিরপুর ১২ এলাকায় বিশাল আয়তনের একটি জলাশয় ভরাট করে অবৈধ বসতি স্থাপন করেন। মিরপুর ১ নম্বরের উত্তর বিশিল মৌজায় গুদারাঘাটের লাল মাঠ এলাকার ঢাকা চিড়িয়াখানার কর্মচারীদের কোয়ার্টারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া প্রায় দুই একর জমিও ইলিয়াস মোল্লার দখলে ছিল। ২০০৯ সালের ১৩ এপ্রিল অবৈধ দখলদাররা চিড়িয়াখানার কোয়ার্টারের জন্য বরাদ্দ হওয়া জমি অবমুক্তের জন্য ছাড়পত্র দিতে ভূমিমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন। ওই আবেদনপত্রে করা সুপারিশকারী ছিলেন ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা নিজেই। এ ছাড়া মিরপুর ১২ নম্বরে মোল্লা মার্কেটের কাছে তুরাগ নদের কিছু অংশ ভরাট করে বস্তি তৈরি করেন ইলিয়াস মোল্লা। স্থানীয়ভাবে এটি ‘ইলিয়াস মোল্লার বস্তি’ হিসেবে পরিচিত ছিল। সেখান থেকে বছরে কয়েক কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় করেন তিনি।

 

অভিযোগের তথ্যমতে, ইলিয়াস মোল্লা ক্ষমতার অপব্যবহার করে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির জন্য অর্ধশত সশস্ত্র ক্যাডার তৈরি করে বিভিন্ন বস্তি, মার্কেট, দোকান ও বাসস্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলেছেন। তার প্রভাবের কাছে অসহায় ছিলেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরাও। জমি দখলের জন্যও তার ছিল নিজস্ব বাহিনী। এসব বাহিনীকে অবৈধ দখল, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও ক্ষমতার অপব্যহারের জন্য কাজে লাগাতেন তিনি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা ও তার ক্যাডার বাহিনী আত্মগোপনে রয়েছে।

 

দুদকের অনুসন্ধান দলের একজন সদস্য জানান, ইলিয়াস মোল্লার বিরুদ্ধে অবৈধ দখল ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগই বেশি। তিনি হাজার হাজার একর খাস জমি, সাধারণ মানুষের জমি দখল করেছেন। কমিশনের অনুসন্ধান দল সেগুলো পর্যায়ক্রমে তদন্ত করে মামলার সুপারিশ করবে। এ ছাড়া তার আয়কর নথিসহ অন্যান্য স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।

 

দুদকের উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম জানান, কমিশনের অনুসন্ধান দল মামলার সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিয়েছে। এখন কমিশন অনুমোদন দিলে মামলা দায়ের করা হবে।

کوئی تبصرہ نہیں ملا


News Card Generator