মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা যখন তুঙ্গে, তখনই সামনে এলো এক চমকে দেওয়া তথ্য—ইরানের অভিজ্ঞ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাঘচিকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল ইসরায়েল। তবে সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দিয়েছে ইরানের গোয়েন্দারা। বিষয়টি জানাজানি হতেই জোরদার হচ্ছে তেহরান-তেলআভিভ উত্তেজনা, আর বিশ্বজুড়ে বাড়ছে উদ্বেগ।
শুক্রবার (২০ জুন) ভারতের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম ইকোনোমিকস টাইমস-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানি গোয়েন্দারা একটি চূড়ান্ত হত্যাচেষ্টা নস্যাৎ করতে সক্ষম হয়েছে। তাদের দাবি, এটি ছিল “একটি বড় ইসরায়েলি ষড়যন্ত্র”। ইরান-ইসরায়েল সম্পর্কের বর্তমান যুদ্ধাবস্থা এবং একই সময়ে জেনেভায় পারমাণবিক আলোচনার প্রেক্ষাপটে এই চেষ্টা ছিল অত্যন্ত কৌশলগত ও তাৎপর্যপূর্ণ।
ঘটনার সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক হলো, ইসরায়েলের এই হত্যাচেষ্টা সংক্রান্ত তথ্য উঠে এসেছে ইসরায়েলি হিট লিস্ট–অপারেশন ‘নার্নিয়া’ থেকে। ইরানের আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা তাসনিম সূত্রে জানা যায়, আরাঘচির ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা মোহাম্মদ হোসেইন রঞ্জবারান এক্স (সাবেক টুইটার)-এ দেওয়া এক পোস্টে বিষয়টি ফাঁস করেন।
তিনি লিখেছেন:-মায়ের মাটির অজানা সৈনিকদের (ইরানের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বাহিনী) নিরব, নিরলস নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণেই এই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ, আজ আমাদের নেতা জীবিত।
রঞ্জবারান জানান, জেনেভা সফরের ঘোষণা আসার পর থেকেই আরাঘচির ওপর হামলার সম্ভাবনা নিয়ে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। কারণ, এই বৈঠক ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং কূটনৈতিকভাবে ইসরায়েল এতে চরমভাবে আপত্তি জানিয়ে আসছিল।
তিনি আরও জানান, আসলে সাইয়্যেদ আব্বাস আরাঘচি নিজেকে কোনো সরকারি পদে নয়, বরং মাতৃভূমির একনিষ্ঠ সৈনিক হিসেবে ভাবেন। আর ঠিক সে কারণেই তিনি হয়ে উঠেছেন ইসরায়েলের জন্য এক ভয়ংকর হুমকি।
বিশ্ব রাজনীতিতে অভিজ্ঞদের কাছে পরিচিত নাম সাইয়্যেদ আব্বাস আরাঘচি। প্রায় তিন দশকের বেশি সময় ধরে ইরানের পররাষ্ট্রনীতির গুরুত্বপূর্ণ চালক তিনি। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক চুক্তি, আঞ্চলিক যুদ্ধবিরতি, ইউরোপ-আমেরিকার সঙ্গে সমঝোতা—সব জায়গাতেই তার দৃপ্ত কূটনৈতিক অবস্থান ইরানকে এক ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
বিশেষ করে, পশ্চিমাদের সঙ্গে জেনেভা পারমাণবিক আলোচনার ক্ষেত্রে তিনি হচ্ছেন ইরানের প্রধান মুখ। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে এটাই তার অপরাধ—একটি পরমাণু শক্তিধর ইরান গঠনের পথে বাধাহীন কূটনীতি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই হত্যাচেষ্টার ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক উত্তেজনাকে আরও উসকে দিতে পারে। প্রশ্ন উঠেছে, ইসরায়েল যদি সত্যিই এমন অভিযান পরিচালনা করে থাকে, তবে কি শুরু হতে যাচ্ছে এক নতুন ছায়াযুদ্ধ?
ইরান সরকার এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সরাসরি পাল্টা হামলার ইঙ্গিত না দিলেও, তেহরান যে চুপ থাকবে না, তা স্পষ্ট। গোয়েন্দা মহল বলছে, এটি শুধু একটি অপারেশন ব্যর্থ হওয়ার গল্প নয়—বরং পরবর্তী সংঘর্ষের সূচনাবিন্দু।
ইসরায়েলের হাতে গড়া এক ভয়ানক ছক, আর ইরানের গোয়েন্দা বাহিনীর চুড়ান্ত সফলতা। এই গল্প শুধু একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে রক্ষা করার নয়—বরং পুরো একটি জাতির নিরাপত্তা রক্ষার প্রতিচ্ছবি।