close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

যেকোনো সময় সংঘাতে জড়াতে পারে ইরানের মিত্ররা

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইরান-ইসরায়েল চলমান উত্তেজনা শুধু দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না—এই আশঙ্কা দিন দিন বাড়ছে। বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, যেকোনো সময় ইরান তার ছায়া সেনা ও আঞ্চলিক মিত্র মিলিশিয়াদের সক্রিয় করে তুলতে পারে। এত..

তেহরান বনাম তেলআবিব — মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার পারদ এখন সর্বোচ্চ চূড়ায়। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলের চালানো বিমান হামলার জেরে যে অঘোষিত যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা যে কোনো সময় বিস্তৃত হয়ে আঞ্চলিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে। এই সম্ভাবনার কেন্দ্রে রয়েছে ইরানের আঞ্চলিক মিত্র ও ছায়া মিলিশিয়ারা, যারা বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে এবং আগেও বিভিন্ন সংঘাতে সক্রিয় ছিল।

আল জাজিরার এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ইরান চাইলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে তার বন্ধুবর গোষ্ঠীগুলোর ঘুম ভাঙিয়ে তাদের আবার মাঠে নামাতে পারে। বিশেষ করে হিজবুল্লাহ, হাশদ আল-শাবি, ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহী, সিরিয়ার প্রো-ইরান বাহিনী—এসব গোষ্ঠী এখনও নানা জায়গায় সক্রিয় বা প্রস্তুত অবস্থায় রয়েছে।

ইরাক, সিরিয়া, লেবানন—এই তিনটি দেশে ইরানের প্রভাবশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। এদের মধ্যে অনেকেই আগে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। এখন যদি পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়, তাহলে নতুন করে হামলার আশঙ্কা অনেক বেড়ে যাবে।

বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের মিত্ররা বর্তমানে কিছুটা দুর্বল হলেও তারা নিশ্চিহ্ন হয়নি। বরং রাজনৈতিক সংকট বা সামরিক হস্তক্ষেপের মুহূর্তে এদের আবারও জোরালোভাবে মাঠে নামানো হতে পারে।

বিশ্লেষকরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে বা তাদের ঘাঁটি থেকে ইরানে হামলা চালানো হয়, তাহলে ইরান কেবল সরাসরি নয় বরং “পরোক্ষ যুদ্ধের কৌশল” হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অংশে তার মিত্রদের দিয়ে জবাব দিতে পারে। এই পরিস্থিতি কার্যত পুরো অঞ্চলকেই এক ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারে।

এর মধ্যে সবচেয়ে স্পর্শকাতর অঞ্চল হলো—ইরাক, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি রয়েছে; লেবানন, যেখানে হিজবুল্লাহ’র মতো শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে; এবং ইয়েমেন, যেখানে হুথিরা প্রায়ই সৌদি জোটের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ে।

সাম্প্রতিক উত্তেজনার সূত্রপাত হয় গত ১৩ জুন। ইসরায়েল শুরু করে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের এক সঙ্ঘবদ্ধ হামলা। তারা একযোগে ইরানের রাজধানী তেহরানসহ বেশ কিছু সামরিক ঘাঁটি, পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র এবং আবাসিক এলাকায় বিমান হামলা চালায়। এসব হামলায় ইরানের সামরিক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বহু সাধারণ মানুষ হতাহত হন।

এই ঘটনার পর থেকেই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। যদিও দুই দেশের মধ্যে এখনও সরাসরি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ ঘোষণা হয়নি, তবে যুদ্ধ-পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংকট শুধু ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এর প্রভাব সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ইয়েমেন এমনকি সৌদি আরব ও উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোতেও ছড়িয়ে পড়বে। বিশেষ করে হুথি বিদ্রোহীরা যদি নতুন করে যুক্ত হয়ে পড়ে, তবে রেড সি এবং আরব উপসাগর হয়ে উঠতে পারে যুদ্ধের নতুন ফ্রন্টলাইন।

এই পুরো সময়জুড়ে আন্তর্জাতিকভাবে এখন পর্যন্ত কোনো গুরুত্বপূর্ণ শান্তি উদ্যোগ দেখা যায়নি। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা রাশিয়া-চীন—কেউই এই সংঘাত থামাতে তৎপর হয়নি। কূটনৈতিক চাপ বা মধ্যস্থতার অভাবে দুই দেশের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি এবং আগ্রাসী মনোভাব আরও ভয়ানক পরিণতির দিকে ধাবিত হতে পারে।

মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা ইতোমধ্যেই বিশ্ব রাজনীতি ও জ্বালানি বাজারে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। যদি এই উত্তেজনা আর একটু বাড়ে, তবে তা শুধু মুসলিম বিশ্বের জন্য নয়, গোটা দুনিয়ার জন্য ভয়ঙ্কর বিপদ বয়ে আনবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই সময় আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার—অন্যথায় এক নতুন যুদ্ধের ইতিহাস লিখতে হতে পারে আমাদের।

Keine Kommentare gefunden


News Card Generator