close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

যেভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে কাস্পিয়ান সাগর

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
জলবায়ু পরিবর্তন ও রাশিয়ার পানি ব্যবস্থাপনায় ত্রুটির কারণে ভয়ংকরভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে কাস্পিয়ান সাগর, হুমকির মুখে বিরল প্রজাতির প্রাণী ও আন্তর্জাতিক পরিবহন রুট।..

কাস্পিয়ান সাগরের তীরবর্তী অঞ্চলজুড়ে এখন শুধুই ফাটল ধরা মাটি, সাদা পাথরের স্তূপ আর নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া জলের স্মৃতি। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্থলবেষ্টিত হ্রদ এখন অস্তিত্ব হারানোর দ্বারপ্রান্তে। এক সময়ের বিশাল জলরাশি এখন প্রতিদিন যেন একটু একটু করে মিলিয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে।

পরিবেশবিদরা বহু আগেই সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু সেই সতর্কবার্তা উপেক্ষিত হয়েছে সরকারের উদাসীন নীতিতে, শিল্পায়নের মোহে, আর তেল-গ্যাস উত্তোলনের লোভে। আজ সেই অবহেলার ভয়ানক ফলাফলের দিকে তাকিয়ে রয়েছে কাস্পিয়ান অঞ্চলের দেশগুলো—রাশিয়া, কাজাখস্তান, তুর্কমেনিস্তান, ইরান ও আজারবাইজান।

২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে ‘ন্যাচার’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, চলতি শতাব্দীর শেষে কাস্পিয়ান সাগরের পানির স্তর ১৮ মিটার পর্যন্ত নেমে যেতে পারে। এর ফলে সাগরের প্রায় ৩৪ শতাংশ আয়তন কমে যাবে।
মাত্র ৫-১০ মিটার পানি কমলেই হুমকির মুখে পড়বে কাস্পিয়ান অঞ্চলের সম্পূর্ণ বাস্তুতন্ত্র।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ইতোমধ্যেই সাগরের পানি উপকূল থেকে প্রায় ১০০ মিটার সরে গেছে। যার ফলশ্রুতিতে জীববৈচিত্র্যের ভবিষ্যৎ হয়ে উঠছে অনিশ্চিত।

এই হ্রদে বাস করে অনেক বিরল ও স্থানিক প্রাণী প্রজাতি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাস্পিয়ান সিলস্টারজন মাছ, যা বিখ্যাত ক্যাভিয়ার উৎপাদনের জন্য পরিচিত। পানির স্তর হ্রাস ও বাসস্থান সংকুচিত হওয়ায় এসব প্রাণী আজ বিলুপ্তির পথে।

কাস্পিয়ান অঞ্চল বিশাল জ্বালানির ভাণ্ডার। পাশাপাশি এটি ‘মিডল করিডোর’-এর অংশ—যা চীন থেকে ইউরোপ পর্যন্ত সবচেয়ে দ্রুত পণ্য পরিবহনের পথ। সাগরের সঙ্কোচন শুধু পরিবেশ নয়, অর্থনীতি ও ভূ-রাজনীতিকেও প্রবলভাবে নাড়া দিচ্ছে।

তেল ও গ্যাস উত্তোলনের নিরবিচার উদ্যোগ, পরিবেশবিধ্বংসী প্রকল্প ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় চুক্তিগুলোর জটিলতা প্রকৃতির এই ভয়াবহ অবস্থার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি রাশিয়ার পানি ব্যবস্থাপনা নীতিও মারাত্মক ভূমিকা রেখেছে কাস্পিয়ান সংকটে। এই সাগরের ৮০-৮৫ শতাংশ পানি আসে ভলগা নদী থেকে, যা ইউরোপের সবচেয়ে দীর্ঘ নদী।

কিন্তু কৃষিকাজ ও শিল্পকারখানার প্রয়োজন মেটাতে নদীজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে বহু বাঁধ ও জলাধার। এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ কমে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে।

নদীর পানি প্রবাহ কমে যাওয়ার ফলে কাস্পিয়ানে পানি পৌঁছাচ্ছে না যথেষ্ট পরিমাণে, ফলে সাগর সঙ্কুচিত হচ্ছে প্রতিদিন।

বহু বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা করছেন—কাস্পিয়ান সাগরের ভবিষ্যৎ যেন অ্যারাল সাগরের মতো না হয়। সোভিয়েত আমলে অতিরিক্ত নদীর পানি তোলার ফলে অ্যারাল সাগর আজ প্রায় শুকিয়ে গেছে। বর্তমানে এটি তার আসল আয়তনের মাত্র ১০ শতাংশ জায়গা দখল করে আছে।

একই চিত্র যেন এবার কাস্পিয়ানেও দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি। প্রকৃতি যদি সময়মতো গুরুত্ব পায়, তাহলে হয়তো শেষরক্ষা সম্ভব।

কাস্পিয়ান সাগর আর শুধু একটি হ্রদ নয়, এটি একটি জীবন, অর্থনীতি ও পরিবেশের স্পন্দন। এই সাগরের ধ্বংস মানে বহু প্রজাতির নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া, আন্তর্জাতিক পরিবহনের সংকট, আর এক বিশাল জ্বালানি সম্পদের অচলাবস্থা।

Inga kommentarer hittades


News Card Generator