২৮ জুন জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় সম্মেলন সামনে রেখে দেশের রাজনীতিতে ফের উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে এই প্রবীণ দলটি। রাজধানীর কাকরাইল কার্যালয় ঘিরে কর্মব্যস্ততা বাড়লেও, একই সঙ্গে জাপার ভেতরে বিভাজনের ছাপও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
দলের একাংশ সম্মেলনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, আরেকাংশ স্পষ্ট করে দিয়েছে—তারা এই সম্মেলনকে মেনে নিচ্ছে না। দুই পক্ষের দড়ি টানাটানির কেন্দ্রে আছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, যিনি বলে দিয়েছেন—আপস নয়, প্রয়োজনে রাজনীতি ছাড়ব, তবুও নীতিতে আপস করব না।
দলের সাবেক ও বর্তমান জ্যেষ্ঠ নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বড় অংশ ঘোষণা দিয়েছে, ২৮ জুন কাকরাইলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই হবে সম্মেলন।
জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে চলছে যোগাযোগ। দলের বাইরে যাওয়া সাবেক নেতাদেরকেও সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
সম্মেলনের অন্যতম উদ্যোক্তা ও দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা একাধিকবার আশাবাদী হয়ে বলেছেন, রোববারের মধ্যে প্রশাসনিক অনুমতি পাওয়া গেলে সম্মেলনের প্রেক্ষাপটই পাল্টে যাবে। তবে এখানেই থেমে নেই বিতর্ক। এই সম্মেলন ঘিরেই তৈরি হয়েছে দ্বিধা, দোলাচল এবং সরাসরি নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব।
একদিকে জি এম কাদের—যিনি চেয়েছেন একক নেতৃত্ব ধরে রাখতে।
অন্যদিকে, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারসহ দলের একাংশ—যারা চাইছেন যৌথ নেতৃত্বের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে দলের নতুন পথচলা।
সম্মেলনের লক্ষ্য এবার শুধু নেতৃত্ব নির্বাচন নয়, বরং গঠনতন্ত্রের ২০ ধারার (ক) উপধারার পরিবর্তন—যার মাধ্যমে ‘চেয়ারম্যানের একচ্ছত্র ক্ষমতা’ কমিয়ে যৌথ নেতৃত্ব চালুর পথ খুলে দেওয়া হবে।
সম্মেলন, নেতৃত্বের ভাগাভাগি ও গঠনতন্ত্র সংশোধনের পেছনের উদ্দেশ্য নিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বক্তব্য একেবারেই সোজাসাপ্টা গঠনতন্ত্র বদলানোর উদ্দেশ্য আমার হাত বেঁধে দেওয়া। আমি পরিশ্রম করব, দায়-দায়িত্ব নেব, আর লাভের মালিক হবেন ওনারা? এটা হতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, তাঁরা শেখ হাসিনার সময়েও আমাকে যন্ত্রণা দিয়েছেন, এখনো তাই করছেন। আমি আর ওনাদের সঙ্গে রাজনীতি করতে চাই না।
উল্টোদিকে, সম্মেলনের উদ্যোক্তা জ্যেষ্ঠ নেতা রুহুল আমিন হাওলাদার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন:আমরা কাউকে সরাতে চাই না। কাদের সাহেব চেয়ারম্যান থাকুন। তবে দলে যেন গণতন্ত্র চর্চা হয়, যৌথ নেতৃত্বে চলুক—এই চাওয়াটুকুই আমাদের।
এই বক্তব্যে স্পষ্ট, আপাতত তাঁরা নেতৃত্বে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের দাবি করছেন না—তবে কাঠামোগত সংস্কার চাইছেন।
প্রথমে জাপার চেয়ারম্যান নিজেই চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ২৮ জুনের জন্য মিলনায়তন বুক করেছিলেন।
কিন্তু হঠাৎ করেই সেই বরাদ্দ বাতিল হয়ে যায়।
তাতে জি এম কাদের সম্মেলন স্থগিতের ঘোষণা দেন।
আর এই সুযোগেই দলের অপর পক্ষ কাকরাইলে দলীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় সম্মেলন করার ঘোষণা দেয়—যা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করেছে।
দলের ভেতরে এখন একটি আলোচনার ঢেউ বইছে—কীভাবে দুই পক্ষকে এক ছাতার নিচে রাখা যায়।
প্রস্তাব এসেছে,
-
জি এম কাদের চেয়ারম্যান থাকবেন,
-
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ হবেন নির্বাহী চেয়ারম্যান,
-
রুহুল আমিন হাওলাদার হবেন মহাসচিব।
এই মডেলে দলের ভিত রক্ষা করেও নেতৃত্বে ভারসাম্য আনার চেষ্টা হচ্ছে। যদিও জি এম কাদেরের সাফ কথা—“এই লোকদের সঙ্গে আমি আর একদমই কাজ করতে চাই না।
দেশের ভেতরে-বাইরের শুভাকাঙ্ক্ষীরা এখন উদ্বিগ্ন। তাঁরা চান না জাতীয় পার্টি ভেঙে যাক।
তবে বাস্তবতা হলো, দলের ভেতরে চাপা আগুন এখন প্রকাশ্যে দাউ দাউ করে জ্বলছে।
এই আগুনে কারা পুড়বে—কিংবা কারা নেতৃত্বে টিকে থাকবে—তা নির্ধারণ করবে ২৮ জুনের বহুল আলোচিত সম্মেলন।