close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

জাল স্বাক্ষরে সম্পত্তি হস্তান্তর! দুদকের নজরে টিউলিপ সিদ্দিক..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
সংক্ষিপ্ত বিবরণ:বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাবেক ব্রিটিশ মন্ত্রী ও শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে সরকারি জমি অবৈধভাবে বরাদ্দ ও জাল নথির মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তরের অভিযোগ এনেছ..

বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যুক্তরাজ্যের সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি অবৈধভাবে বরাদ্দ নেওয়া এবং জাল নথি ব্যবহার করে সম্পত্তি হস্তান্তরের অভিযোগ এনেছে। দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে, টিউলিপ সিদ্দিক ভুয়া নোটারি নথির মাধ্যমে তার বোন আজমিনা সিদ্দিকের নামে ঢাকার গুলশানের একটি ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেন। সেই নথিতে আইনজীবীর স্বাক্ষর জাল বলে প্রমাণিত হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশিত হয়। দুদকের দাবি, শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পে সরকারি জমি বরাদ্দ নিয়েছেন, যা আইনবহির্ভূত। দুদকের তদন্তে আরও জানা যায়, তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পত্তির প্রকৃত মালিকানা গোপন করার চেষ্টা করেন।

দুদক সূত্র জানায়, টিউলিপ সিদ্দিক তার রাজনৈতিক ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে পূর্বাচল নিউ টাউনে এক একর সরকারি জমি নিজ ও পরিবারের জন্য বরাদ্দ নিশ্চিত করেন। অথচ তার ঢাকায় আগেই ব্যক্তিগত সম্পত্তি থাকায়, তিনি প্লট বরাদ্দের জন্য যোগ্য ছিলেন না। এছাড়াও, তিনি সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নির্ধারিত জমির লটারির নিয়ম উপেক্ষা করে বিশেষ সুবিধা নিয়ে জমির মালিকানা নেন।

জাল নোটারি নথি ও আইনজীবীর বক্তব্য

দুদকের তদন্তপত্রে উল্লেখ করা হয়, টিউলিপ সিদ্দিক গুলশানের একটি ফ্ল্যাট তার বোনের নামে হস্তান্তর করতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী সিরাজুল ইসলামের সিলসহ জাল নোটারি নথি ব্যবহার করেন। তবে গাজী সিরাজুল ইসলাম এই নথির সত্যতা অস্বীকার করে বলেন, ‘‘এই নোটারি আমার করা নয়। সিলটিতে আমার নাম থাকলেও স্বাক্ষর আমার নয়।’’

এই বিতর্কিত নথিটি একটি ‘হেবা দলিল’, যা ইসলামিক আইনের অধীনে সম্পত্তি উপহার দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। ২০১৫ সালে তৈরি করা এই দলিলে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দুদক বলছে, এটি সম্পত্তির প্রকৃত মালিকানা গোপন রাখার প্রচেষ্টার অংশ।

দুদকের তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়া

দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিকসহ শেখ হাসিনার পরিবারের একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির অবৈধ বরাদ্দ ও দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, ‘‘প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের বিরুদ্ধে আরও অনেক দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে।’’

দুদকের অভিযোগপত্র আদালতে উপস্থাপন করা হলে, বিচারিক কার্যক্রম শুরু হবে। আদালত অভিযোগ গ্রহণ করলে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া চালু হতে পারে।

টিউলিপ সিদ্দিকের প্রতিক্রিয়া

টিউলিপ সিদ্দিক তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ বারবার অস্বীকার করে আসছেন। গত জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করার সময় তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি সব সময় স্বচ্ছতা বজায় রেখেছি এবং রাজনৈতিক চাপে পড়ে কোনো ভুল স্বীকার করতে রাজি নই।’’

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের পক্ষ থেকে টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, এ বিষয়ে তার কোনো তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

পরিস্থিতির পটভূমি

২০২৩ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামল শেষ হয়। এরপর থেকেই তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও রাষ্ট্রীয় জমি বরাদ্দ সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ সামনে আসে। বিশেষ করে, পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পে ভূমি বরাদ্দ নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

দুদকের মতে, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের ঘনিষ্ঠজনরা নিয়ম ভেঙে সরকারি সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

পরবর্তী পদক্ষেপ কী?

দুদকের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। যদি আদালত এই অভিযোগ গ্রহণ করে, তাহলে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে। ব্রিটিশ ও আন্তর্জাতিক মহল বিষয়টি গভীর নজরদারিতে রেখেছে।

Tidak ada komentar yang ditemukan