close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

ইতিহাস ঐতিহ্যের অন্যতম নিদর্শন রাজা টংকনাথের রাজবাড়ি

আব্দুল্লাহ আল নোমান avatar   
আব্দুল্লাহ আল নোমান
****

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঠাকুরগাঁও।।

রাণীশংকৈল উপজেলা শহর থেকে ১.৩ কিমি পূর্বে বাচোর ইউনিয়নের কুলিক নদীর তীরে প্রায় ১০ একর জমির উপর রাজা টংকনাথের রাজবাড়িটি অবস্থিত। উপজেলা সদর থেকে ১০ টাকা ভ্যান ভাড়ায় পৌঁছা যায় রাজা টংকনাথের রাজবাড়িতে। রাজবাড়ির নির্মাণশৈলী কারুকার্যময় বেশ সুন্দর। রাজবাড়ির মেঝে ছিল মার্বেল পাথরের তৈরি। একসময়ের জাঁকজমকপূর্ণ কারুকার্জে খচিত প্রাচীন এই রাজভবনটিতে এখনো অনেক কারুকাজ করা দেয়াল অবশিষ্ট আছে। রাজবাড়ীটির ভিতরের পূর্ব পাশে একটি অন্ধরমহল রয়েছে। রাজবাড়ির পশ্চিমদিকে রয়েছে সিংহদরজা। অপরপ্রান্তে দুটি দিঘি রয়েছে। বিশাল এক সিংহ দরজা দিয়ে রাজবাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে হয়। রাজবাড়ি সংলগ্ন উত্তর—পূর্ব কোণে রয়েছে কাচারী বাড়ি। লাল রংয়ের দালানটি স্থাপত্যশৈলীতে আধুনিকতার পাশাপাশি ভিক্টোরিয়ান অলঙ্করণের ছাপ সুস্পষ্ট। উনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে রাজবাড়িটি নির্মিত হয়। রাজা টংকনাথের পিতা বুদ্ধিনাথের আমলেই রাজবাড়ি নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বুদ্ধিনাথের মৃত্যুর পরে রাজা টংকনাথ রাজবাড়ির অসমাপ্ত কাজ শেষ করেন। ইতিহাস থেকে জানা যায়, রাজা টংকনাথ এর পূর্ব—পুরুষদের কেউ জমিদার ছিলেন না। বর্তমানে রাণীশংকৈল উপজেলা শহর হতে ৭ কিমি পূর্বে কাতিহার নামক জায়গায় গোয়ালা বংশীয় নিঃসন্তান এক জমিদার বাস করতেন। জমিদারের মন্দিরে সেবায়েত হিসাবে কাজ করতেন টংকনাথের পিতা বুদ্ধিনাথ। গোয়ালা জমিদার ভারত এর কাশি যাওয়ার সময় তাম্রপাতে দলিল করে যান যে, তিনি ফিরে না এলে মন্দিরের সেবায়েত বুদ্ধিনাথ জমিদারির মালিক হবেন। গোয়ালা জমিদার ফিরে না আসায় বুদ্ধিনাথ জমিদারির মালিক হন। তবে অনেকে মনে করেন এই ঘটনা বুদ্ধিনাথ দু—এক পুরুষ পূর্বেরও হতে পারে। রাজা টংকনাথ চৌধুরী খুব বড় মাপের জমিদার না হলেও তার আভিজাত্যের কমতি ছিল না। জমিদার বুদ্ধিনাথের দ্বিতীয় ছেলে টংকনাথ তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের আস্থা অর্জন করার জন্য মালদুয়ার স্টেট গঠন করেন। বিভিন্ন সময় সমাজ সেবা মূলক কাজের জন্য ১৯২৫ সালের ১৮ নভেম্বর তৎকালীন বৃটিশ গর্ভনর হাউসে টংকনাথ চৌধুরীকে বৃটিশ সরকার চৌধুরী উপাধিতে ভূষিত করেন। কথিত আছে, টংকনাথের আমন্ত্রণে তৎকালীন বড়লাট এবং দিনাজপুরের মহারাজা গিরিজনাথ রায় রাণীশংকৈলে এলে আমন্ত্রিত অতিথিদের টাকার নোট পুড়িয়ে রীতিমতো রাজকীয় অভ্যর্থনা ও আপ্যায়ন করান এবং পর্যাপ্ত স্বর্ণালংকার উপহার দেন। এর ফলে তৎকালীন বৃটিশ সরকারের কাছ থেকে চৌধুরী উপাধি এবং দিনাজপুরের মহারাজা গিরিজনাথ রায়ের কাছ থেকে রাজা উপাধি পান। পরবর্তীতে দিনাজপুরের মহারাজা গিরিজনাথ রায়ের বশ্যতা স্বীকার করে রাজা উপাধি পান। পরবর্তীতে রাজা টংকনাথের স্ত্রী রাণী শংকরী দেবীর নামানুসারে মালদুয়ার স্টেটের নাম করণ করা হয় রাণীশংকৈল। দেশভাগের প্রাক্কালে রাজা জমিদারি ছেড়ে ভারতে পাড়ি জমান । এর মধ্য দিয়ে মালদুয়ার স্টেট রাজা টংকনাথ চৌধুরীর জমিদারি পরম্পরার সমাপ্তি ঘটে। রাজবাড়ি থেকে প্রায় দু'শ মিটার দক্ষিণে কুলিক নদীর তীরে রাস্তার পূর্বপ্রান্তে রয়েছে জয়কালী মন্দির। এই মন্দিরটি রাজবাড়ির চেয়েও প্রাচীন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকসেনারা মন্দিরটির ক্ষতি সাধন করে। বর্তমানে ওই এলাকার হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ইসকন মন্দির সংস্কার করে পূজা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রায় প্রতিদিনই অনেক আগ্রহভরে দৃষ্টিনন্দন এই রাজবাড়িটি দেখতে আসেন দূরদূরান্তের মানুষ। এছাড়াও প্রতি ঈদের ছুটিতে হাজার হাজার ভ্রমণ পিপাসুরা আসেন রাজবাড়ীটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে। রাজবাড়িটি ২০১৯ সালে গেজেট হয়। ইতিহাস ঐতিহ্যের কারণে ৯ জানুয়ারী হানিফ সংকেতের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদি রাজবাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়। রাজবাড়ীটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ও জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকায় রাণীশংকৈলের কৃতি সন্তান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি এ্যাডভোকেট মেহেদী হাসান শুভ হাইকোর্টে রিট করে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের নজরে আসে। ২০২৪ সালে রাজবাড়ি পরিদর্শনে আসেন প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাবিনা আলম। এসময় তিনি রাজবাড়ীটিকে সংস্কারের আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে ১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সামান্যতম সংস্কার কাজ শুরু করলেও তা বন্ধ হয়ে যায়। রাজবাড়ীটি সংস্কার করা হলে এটি হতে পারে উপজেলার একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র এমন মন্তব্য দর্শনার্থীদের। যদিও কিছুদিন আগে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর থেকে বাড়িটির কিছু সংস্কার করা হয়েছে তবে এটি চলমান রাখার দাবি এলাকাবাসীর । অনেকে মনে করেন এখানে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলে বাড়িটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন

No comments found


News Card Generator