ইসরায়েলের হামলায় কেঁপে উঠলো ইরান! পাঁচ হাসপাতালে ধ্বংসযজ্ঞ, আন্তর্জাতিক মহলে উত্তেজনা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইরানে পাঁচটি হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলার ঘটনায় দেশজুড়ে আতঙ্ক! রোগীরা শ্বাসকষ্টে ভুগছেন, চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত। রেড ক্রিসেন্ট আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে পাঠাবে হামলার প্রমাণ। বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা—জাতিসং..

ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার মধ্যে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংঘাত। গত এক সপ্তাহের ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে চিকিৎসাধীন রোগীদের সেবাদান ব্যাহত হওয়ায় দেশজুড়ে তৈরি হয়েছে এক চরম মানবিক সংকট।

ইরানের জরুরি সেবা বিভাগের প্রধান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, এই হামলাগুলো শুধু একটি রাষ্ট্রের উপর নয়, বরং মানুষের মৌলিক অধিকার, চিকিৎসার নিরাপত্তা ও মানবতাবোধের উপরও আঘাত হেনেছে। ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, হাসপাতালে এসব হামলায় শুধু ভবনের ক্ষয়ক্ষতি নয়, চিকিৎসাধীন রোগীদের জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। ধোঁয়ায় অনেকেই শ্বাসকষ্টে ভুগছেন।

ইরানি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রধান পিরহোসেইন কোলিভান্দ এক চাঞ্চল্যকর মন্তব্যে জানান, এই হামলাগুলোর প্রভাব এবং এর যথাযথ প্রমাণ আমরা রেডক্রসসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থায় পাঠাবো, যাতে বিশ্বের বিবেক জাগ্রত হয়।

তিনি বলেন, বিস্ফোরণের ধোঁয়ায় শিশু ও বৃদ্ধ রোগীদের শ্বাসপ্রশ্বাসে জটিলতা দেখা দিয়েছে, যা চিকিৎসা না পেলে প্রাণঘাতী হতে পারে। এ সময় হাসপাতাল থেকে ভিডিওচিত্র, ধ্বংসস্তূপ ও রোগীদের সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হচ্ছে প্রমাণ হিসেবে।

এই সাম্প্রতিক বিমান হামলাগুলো হচ্ছে এমন এক সময়, যখন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে আকাশযুদ্ধ দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রবেশ করেছে। পরিস্থিতি এতটাই ঘোলাটে যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকরা ইরানকে আলোচনা টেবিলে ফেরানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।

অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে সরাসরি জড়াবে কি না, সে বিষয়ে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

গত শুক্রবার ইসরায়েল ইরানের বিভিন্ন পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালায়। তাদের দাবি, ইরান যেন পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করে, সেজন্যই এই পদক্ষেপ। তবে ইরান তাৎক্ষণিকভাবে পাল্টা জবাব দেয়। তারা ইসরায়েলে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে প্রতিশোধ নেয়। ইরান জোর দিয়ে বলছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত।

ইরানের মানবাধিকার সংগঠন হারানা জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৩৯ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ইরানি সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা, পরমাণু বিজ্ঞানী এবং সাধারণ বেসামরিক নাগরিক।
অন্যদিকে, ইরানের পাল্টা হামলায় অন্তত দুই ডজন ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

তবে এই সব পরিসংখ্যান নিরপেক্ষভাবে যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স বা অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য ইরানের পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র এবং মিসাইল ঘাঁটি, তবে গোপনে তারা ইরানে সরকার পতনের কৌশলও নিতে পারে। এক ইউরোপীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তার মতে, ইসরায়েল চায় ইরানের রাজনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ুক।

এই ইঙ্গিত আরও স্পষ্ট হয় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু-এর এক সাম্প্রতিক বক্তব্যে। তিনি বলেন, “আমরা কি ইরান সরকারের পতন চাই? এটা হতে পারে আমাদের আক্রমণের ফলাফল। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ইরানের জনগণের—তারা যদি চায়, তাহলে স্বাধীনতার জন্য রুখে দাঁড়াক।

ইরান দাবি করেছে, তাদের প্রতিরোধমূলক হামলাগুলো শুধুমাত্র সামরিক ঘাঁটিতে সীমাবদ্ধ ছিল। তবে ইসরায়েল পাল্টা দাবি করেছে, একাধিক বেসামরিক স্থাপনা ও হাসপাতালেও ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে।

এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চরম উদ্বেগ প্রকাশ করছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা এই রক্তক্ষয়ী সংঘাত থামিয়ে কূটনৈতিক সমাধানে পৌঁছাতে উভয় পক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছে।

এই সংঘাত দিনে দিনে রূপ নিচ্ছে এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে। যখন রোগী-ভর্তি হাসপাতালেও বোমা পড়ছে, তখন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো চুপ থাকতে পারে না।
বিশ্ববাসীর একটাই দাবি—পরমাণু নয়, শান্তি হোক অস্ত্র। ইরান ও ইসরায়েল উভয়কেই এই বার্তা বুঝতে হবে, নতুবা এই আগুন গোটা মধ্যপ্রাচ্যকেই গ্রাস করে ফেলবে।

Keine Kommentare gefunden


News Card Generator