ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নতুন মোড় নিয়েছে। সর্বশেষ গত ২৩ জুন, সোমবার সকাল — ইরান আবারও একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা মেহের নিউজ এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এটি চলতি মাসে ইসরায়েলের ওপর ইরানের ২১তম আক্রমণ, যা "অপারেশন ট্রু প্রমিস III"-এর আওতাভুক্ত। এই অভিযানের মাধ্যমে ইরান প্রকাশ্যে জানিয়ে দিয়েছে— তারা আর কূটনৈতিক নীরবতা নয়, চায় সরাসরি প্রতিরোধ।
ইরানের দাবি, ইসরায়েল ১৩ জুন কোনো উসকানি ছাড়াই তেহরান, ইস্পাহান ও কেরমান অঞ্চলে ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। সেই হামলায় বিধ্বস্ত হয় পারমাণবিক গবেষণাগার, সামরিক ঘাঁটি এবং আবাসিক এলাকা। এতে প্রাণ হারায় অন্তত ৪০০ জন ইরানি নাগরিক, যার মধ্যে ছিলেন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা, পরমাণুবিজ্ঞানী এবং নিরীহ বেসামরিক মানুষ।
এই ঘটনার জেরে ইরান সরকার ঘোষণা দেয়— তারা “অপরাধের যথাযথ জবাব” দিতে বাধ্য হবে।
ইরানের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সংস্থা ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (IRGC) এক ঘোষণায় জানিয়েছে,
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শুধু শুরু হয়েছে। যতক্ষণ না আগ্রাসনের মূল শেকড় উপড়ে ফেলা যায়, আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র থামবে না।
সোমবারের হামলায় ইরান ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চল, নেভাটিম বিমান ঘাঁটি এবং টেল আভিভের কাছে একটি সামরিক কারখানা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ে। হামলার সময় পুরো আকাশজুড়ে সাইরেন বেজে ওঠে, নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়।
এই ঘটনার পর জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া এবং চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশ দু'পক্ষকেই সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়ে ইরানকে “উসকানিমূলক ও বিপজ্জনক” কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
অন্যদিকে, লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুতি গোষ্ঠী, এবং সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ সরকার ইরানের প্রতিরোধকে বৈধ ও সময়োচিত বলে মন্তব্য করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলা-পাল্টা হামলার ধারা যদি বন্ধ না হয়, তাহলে খুব শিগগিরই এটি এক পূর্ণাঙ্গ মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের রূপ নিতে পারে। বিশেষ করে যখন ইসরায়েল নিজ দেশেই রাজনৈতিক সংকট এবং আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে।
যদি ইসরায়েল আবারও কোনো উসকানি দেয়, তাহলে আমাদের প্রতিক্রিয়া হবে আরও তীব্র, আরও গভীর, এবং আরও বিস্তৃত।
ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা এখন আর কূটনীতির পরিসরে সীমাবদ্ধ নেই। এটা পরিণত হয়েছে অস্ত্রের লড়াইয়ে— যেখানে প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্র কেবল লক্ষ্যবস্তু নয়, বরং প্রতিশোধের প্রতীক। প্রশ্ন হলো, এই সংঘর্ষ কতদূর গড়াবে? এবং বিশ্ব কতটা প্রভাবিত হবে?