সিরিয়ার বুকে ইসরায়েলের বজ্রাঘাত: প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের পাশে ভয়ঙ্কর বিমান হামলা, উত্তেজনার পারদ চরমে!
মধ্যপ্রাচ্যে এক নতুন উত্তেজনার সূচনা হয়েছে ২ মে শুক্রবার ভোররাতে, যখন সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের আকাশজুড়ে হঠাৎই গর্জে ওঠে যুদ্ধবিমান। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের খুব কাছাকাছি এলাকায় ইসরায়েল চালিয়েছে এক মারাত্মক বিমান হামলা, যা ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
বিশ্বের অন্যতম নির্ভরযোগ্য সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানিয়েছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এক যৌথ বিবৃতিতে এই অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তাঁরা জানান, সিরিয়ায় সংখ্যালঘু দ্রুজ সম্প্রদায়ের প্রতি হুমকি দেখা দেওয়ায় এই সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
দ্রুজ সম্প্রদায়: কারা তারা, কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
দ্রুজরা মূলত একটি ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠী, যাদের শিকড় রয়েছে ইসলাম ধর্মের শাখা হিসেবে। তারা প্রধানত সিরিয়া, লেবানন এবং ইসরায়েলে বসবাস করে। বহু দশক ধরে এই সম্প্রদায় তাদের স্বাতন্ত্র্য টিকিয়ে রাখার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে আসছে।
সম্প্রতি সিরিয়ার সাহনায়াহ শহরে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪০ জন, যাদের অনেকেই ছিলেন দ্রুজ সম্প্রদায়ের সদস্য। এ সংঘর্ষকে কেন্দ্র করেই ইসরায়েল দাবি করছে, সিরীয় বাহিনী ও চরমপন্থীদের তৎপরতা দ্রুজদের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে উঠেছে।
হামলার সময় ও স্থান: রাষ্ট্রপতির প্রাসাদের কাছেই বিস্ফোরণ!
হামলাটি মূলত দামেস্ক শহরের দক্ষিণাঞ্চলে সংঘটিত হয়, যেখানকার আকাশভূমি ভোরবেলা হঠাৎই আগুনের গোলায় আলোকিত হয়ে ওঠে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বোমা বিস্ফোরণের শব্দ এতটাই ভয়ংকর ছিল যে দূরের শহরগুলোতেও কেঁপে ওঠে ভবন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের এত কাছে হামলা চালানো ইসরায়েলের এক ধরনের রাজনৈতিক বার্তা। এটি সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে একটি সরাসরি হুমকি হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে।
টানা দুই দিন ধরে হামলা, এর আগেও আঘাত হেনেছিল ইসরায়েল
শুধু শুক্রবারই নয়, এর আগের দিন অর্থাৎ বুধবারেও দামেস্কের উপকণ্ঠে ইসরায়েল বিমান হামলা চালিয়েছিল। ওই হামলাতেও বেশ কিছু সামরিক স্থাপনা ধ্বংস হয় বলে দাবি করেছে স্থানীয় সূত্র। ইসরায়েল বলছে, এটি ছিল চরমপন্থীদের প্রতিরোধে একটি প্রতিক্রিয়ামূলক পদক্ষেপ।
মধ্যপ্রাচ্য এখন নতুন এক দ্বন্দ্বের মুখে?
এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনার ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশ্ন উঠেছে—ইসরায়েলের এই আগ্রাসী কৌশল কি সিরিয়াকে পাল্টা জবাব দিতে প্ররোচিত করবে? না কি রাশিয়া, ইরান কিংবা লেবাননের হেজবুল্লাহ জড়িয়ে পড়বে আরও বড় সংঘর্ষে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপে নেতানিয়াহু সরকার হয়তো আন্তর্জাতিক ইস্যুকে ব্যবহার করছে নিজেদের অবস্থান মজবুত করতে। অন্যদিকে, সিরিয়ার সরকার এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক সমর্থন পেতে জাতিসংঘে নালিশ জানাতে পারে।
ইসরায়েলের এই সামরিক অভিযান শুধু সিরিয়াই নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে এক নতুন অনিশ্চয়তার পথে ঠেলে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের একদম নিকটে হামলা চালিয়ে ইসরায়েল বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা আর কোনও হুমকি সহ্য করবে না। এখন দেখার বিষয়, সিরিয়া কিংবা তার মিত্ররা এর জবাবে কী পদক্ষেপ নেয়।



















