ইসরা য়ে লের বিপদে পাশে দাঁড়াতে সাহায্য পাঠানোর প্রস্তাব ফি লিস্তিনের..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
যারা বছরের পর বছর বুলডোজার, গুলিবর্ষণ আর ট্যাংকের নিচে পিষ্ট হয়েছে, সেই ফিলিস্তিনিরাই এবার সাহায্যের প্রস্তাব দিল সেই ইসরায়েলকে—যেখানে দাবানলের আগুন নরক বানিয়ে তুলেছে পাহাড়ি জনপদ। এ যেন প্রতিশোধ নয়, প..

শত্রুর নয়, মানবতার পাশে ফিলিস্তিন! ইসরায়েলের ভয়াবহ দাবানলে সাহায্যের হাত বাড়াল যাদের বুকেই আগুন জ্বলেছে

এক সময় যাদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ট্যাংক, যাদের জীবন ছিন্নভিন্ন করেছিল যুদ্ধ আর আগ্রাসন—তারাই আজ পাশে দাঁড়াতে চায় সেই রাষ্ট্রের, যে রাষ্ট্র তাদের অস্তিত্বকে বারবার অস্বীকার করেছে। বিশ্ব রাজনীতির এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত হয়ে রইল ফিলিস্তিনিদের এই মহৎ উদ্যোগ।

জেরুজালেম সংলগ্ন ইসরায়েলের পাহাড়ি অঞ্চলজুড়ে ভয়াবহ দাবানলের ঘটনা নাড়া দিয়েছে গোটা দেশকে। আগুন এতটাই তীব্র যে বনভূমি, বসতি ও জনপদ একে একে গ্রাস করছে সেই লেলিহান শিখা। দেশটির ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, এটি হতে পারে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানল, যা এখনই নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে ভয়াবহ বিপর্যয় অনিবার্য।

ইসরায়েল সরকারের মুখপাত্র জানান, “আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি। কিন্তু প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিক বাধার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।” জরুরি সহায়তার আবেদন জানানো হয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে। ইতালি ও ক্রোয়েশিয়া ইতিমধ্যেই অগ্নিনির্বাপক বিমান পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যোগাযোগ করা হয়েছে গ্রিস, সাইপ্রাস ও বুলগেরিয়ার সাথেও।

কিন্তু সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনা ঘটেছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে। টাইমস অফ ইসরায়েল এক প্রতিবেদনে জানায়, ফিলিস্তিন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দিয়েছে—তারা ইসরায়েলের জেরুজালেম অঞ্চলে আগুন নেভাতে নিজেদের ফায়ার সার্ভিস সদস্য পাঠাতে প্রস্তুত।

এই প্রস্তাব শুনে বিশ্বজুড়ে বিস্ময় আর প্রশংসার ঝড় উঠেছে। কারণ এই জায়গাগুলো একসময় ছিল যুদ্ধের প্রধান ময়দান। এই অঞ্চলগুলোয় ছিল ইসরায়েলের আগ্রাসনের চিহ্ন—বুলডোজারে গুঁড়িয়ে দেওয়া ঘরবাড়ি, রক্তাক্ত গলিপথ, শিশুদের কান্না আর ধ্বংসস্তূপ। আজ সেই স্থানেই সহানুভূতির আগুন নিয়ে ছুটে যেতে চাইছে ফিলিস্তিনিরা।

তবে এখনো পর্যন্ত ইসরায়েল সরকার ফিলিস্তিনের এই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। অতীতে বড় ধরনের বিপর্যয়ে কিছু ফিলিস্তিনি দমকল বাহিনী সহায়তা করেছিল, তবে তা ছিল সীমিত আকারে। এবারের প্রস্তাবটি এসেছে সরকারিভাবে—আন্তর্জাতিক মানবিক মূল্যবোধের একটি সাহসী নিদর্শন হয়ে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, “এটা শুধু আগুনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নয়। এটা ঘৃণার বিপরীতে ভালোবাসা, প্রতিহিংসার বিপরীতে সংযম, আর প্রতিশোধের বিপরীতে মানবতার এক উজ্জ্বল আলো।”

টাইমস অফ ইসরায়েল তাদের প্রতিবেদনে এক অসাধারণ মন্তব্য করেছে:

“এই দাবানল শুধু বনভূমি পোড়ায়নি। এটা উল্টো তুলে ধরেছে একটি আয়না, যেখানে দেখা যায় দুই বিপরীত মানসিকতার সংঘর্ষ। একদিকে আগ্রাসন, অন্যদিকে করুণা। সেই করুণার হাত এসেছে যেখান থেকে কেউ কল্পনাও করেনি—ফিলিস্তিন।”

বিশ্ব ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল। এটি ভবিষ্যৎ শান্তির সম্ভাবনাকে আবার আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা।

যুদ্ধ, আগ্রাসন আর রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে তৈরি হয়েছে যে সম্পর্ক—সেই স্থানে যদি কখনো শান্তির বীজ অঙ্কুরিত হয়, তবে এই মুহূর্তটি তারই সূচনা হতে পারে। কারণ মানুষ যদি প্রতিপক্ষের চোখে মানুষ দেখতে শেখে, তবে দুনিয়ার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর আগুনও নিভে যেতে পারে হৃদয়ের কোমলতায়।

Hiçbir yorum bulunamadı