close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

ইসলামি বিপ্লবে পদচ্যুত শাহর পুত্রকে ব্রিটিশ এমপিদের আমন্ত্রণ..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইরানে ফের রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর শাহর পুত্র রেজা পাহলভিকে আমন্ত্রণ জানালেন ব্রিটিশ এমপিরা। লন্ডনে দেবেন বক্তব্য, ইসলামি প্রজাতন্ত্রের পতনের রূপরেখা তুলে ধরবেন।..

১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবে ক্ষমতাচ্যুত ইরানের শেষ শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির পুত্র রেজা পাহলভি আবারও খবরের শিরোনামে। নির্বাসিত এই রাজপুত্র আগামী সোমবার যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নিতে যাচ্ছেন। সেখানে তিনি ব্রিটিশ এমপি ও হাউস অব লর্ডসের সদস্যদের সামনে ইরানের বর্তমান পরিস্থিতি, শাসনব্যবস্থার পতনের সম্ভাবনা এবং ভবিষ্যতে ইরানে ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পরিকল্পনা তুলে ধরবেন।

বৈঠকটি আয়োজিত হবে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভবনের একটি কমিটিতে বিকেল ৫টায়। আয়োজকদের মধ্যে রয়েছেন লেবার পার্টির এমপি লুক একেহার্স্ট এবং কনজারভেটিভ দলের আফরা ব্র্যান্ডরেথ। মিডল ইস্ট আইয়ের প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে বলা হয়েছে, এ আয়োজনটি মূলত ব্রিটিশ আইনপ্রণেতাদের কাছে ইরানি রাজতন্ত্রপন্থী মতবাদ তুলে ধরার উদ্দেশ্যেই নেওয়া হয়েছে।

লুক একেহার্স্ট বলেন, “ইরানি জনগণ কী ধরনের শাসন চায়, তা একমাত্র তারাই ঠিক করবে। তবে বিরোধী কণ্ঠগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি জানাও আমাদের দায়িত্ব।

৬৪ বছর বয়সী রেজা পাহলভি নির্বাসনে থাকলেও তার পরিচিতি এখনও ‘নির্বাসিত রাজা’ নামে। তার বাবা শাহ পাহলভিকে গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে ইরানে ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই থেকে রেজা পাহলভি বিভিন্ন সময় রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। এর অংশ হিসেবে তিনি একাধিকবার ইসরায়েল সফর করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এসব পদক্ষেপ ইরানি জনগণের একাংশের মধ্যে বিতর্ক ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে রেজা পাহলভির আমন্ত্রণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন লেবার মুসলিম নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান আলী মিলানি। তিনি বলেন, “একজন স্বৈরশাসকের পুত্রকে আমন্ত্রণ জানানো মানে ইরানিদের স্বাধীনতার লড়াইকে অবমাননা করা।”

তিনি আরও বলেন, “পাহলভি কখনোই তাঁর বাবার সময়ে ঘটে যাওয়া নিপীড়নের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেননি। অথচ সে সময় বিশেষ পুলিশ বাহিনী অসংখ্য মানুষকে গুম ও হত্যা করেছিল।”

রেজা পাহলভির সাম্প্রতিক এক বক্তব্যে তিনি বলেন, “ইরানের বর্তমান সংকটের মূল কারণই দেশটির ইসলামি শাসনব্যবস্থা। এই ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করলেই কেবল মুক্তি মিলবে।”

পাহলভির এই মন্তব্যের জবাবে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, “তুমি যদি এতই নিশ্চিত হও, তাহলে ইরানে ফিরে গিয়ে নেতৃত্ব দাও—ওই শাসনব্যবস্থা হটাও।” তিনি রেজাকে ‘রক্তপিপাসু পরজীবী উপনিবেশবাদী দালাল’ বলে কটাক্ষ করেন।

এ আয়োজনে জড়িত লুক একেহার্স্ট নিজেও বিতর্কিত এক চরিত্র। ২০২১ সালে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তিনি জাতিসংঘকে ইহুদিবিরোধী মনে করেন কি না। উত্তরে তিনি ‘হ্যাঁ’ বলেন। তিনি পশ্চিম তীর ও গোলান মালভূমিকে ইসরায়েলের অংশ হিসেবে রাখার পক্ষে। অথচ জাতিসংঘ স্পষ্ট জানিয়েছে, এই ভূমিগুলোতে বসতি স্থাপন আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধের শামিল।

বর্তমানে ইরানে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ধর্মীয় রক্ষণশীল শাসনের বিরোধিতা এবং পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এই ধরনের বৈঠক নতুন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। রেজা পাহলভি কি সত্যিই ইরানিদের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করেন, নাকি তিনি পশ্চিমা সমর্থনে ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার আশায় বিভোর একজন অতীতপ্রেমী রাজপুত্র?

ইরানের জনগণই শেষ পর্যন্ত ঠিক করবেন, তারা নতুন ভবিষ্যৎ চাইবেন—না কি পুরনো ইতিহাস ফিরিয়ে আনবেন।

Nessun commento trovato


News Card Generator