close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সংবাদ সম্মেলন থেকে বের করে দেওয়া হলো নারী সাংবাদিককে..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বরিশালে ইসলামী আন্দোলনের সংবাদ সম্মেলন থেকে এক নারী সাংবাদিককে শুধু তার ‘নারী পরিচয়ের’ কারণে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রতিবাদ উপেক্ষা করে সংগঠনটি জানায়—নারী সাংবাদিক ‘গ্রহণযোগ..

একবিংশ শতকে যখন নারীর অধিকার ও পেশাগত মর্যাদা নিয়ে বিশ্বজুড়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, ঠিক তখনই বরিশালে ঘটে গেল এক লজ্জাজনক ও হতবাক করা ঘটনা। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিক হিসেবে উপস্থিত হয়ে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন দৈনিক যুগান্তরের মাল্টিমিডিয়া প্রতিবেদক মনিক চৌধুরী

ঘটনাটি ঘটে বরিশাল প্রেসক্লাব মিলনায়তনে শনিবার দুপুরে। সংবাদ সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে অন্যান্য সাংবাদিকদের মতো মনিকাও তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন—ক্যামেরা সেটআপ, বুম মাইকে শব্দ ধারণ, ফুটেজ সংগ্রহ ইত্যাদি। হঠাৎ করেই চরমোনাই অনুসারীদের কয়েকজন এসে তাকে বলেন,
“আপনি নারী, তাই এখানে থাকতে পারবেন না। আমাদের এখানে নারী সাংবাদিক গ্রহণযোগ্য নয়। দয়া করে বেরিয়ে যান।”

সাংবাদিক মনিকা বিস্মিত হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করেন, “নারী সাংবাদিক কেন গ্রহণযোগ্য নয়?” উত্তর আসে সরল অথচ রূঢ়,
“এখানে অনেক হুজুর আছেন, তারা এটি পছন্দ করবেন না।”

মনিকার চোখের সামনে ঘটে যায় সেই অসম্মানজনক দৃশ্য। সাংবাদিকদের পেশাগত জায়গায় শুধুমাত্র নারী পরিচয়ের কারণে তাকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়। উপস্থিত কিছু সাংবাদিক প্রতিবাদ জানালেও, চরমোনাই পক্ষ দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দেয়,
“নারী সাংবাদিক এখানে কিছুতেই থাকতে পারবেন না।”
এই বক্তব্যে মনের উপর প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মনিকা।

তিনি বলেন,
“আমি তো একজন পেশাদার সাংবাদিক। নারী, পুরুষ, ট্রান্সজেন্ডার—আমার পরিচয় একজন সংবাদকর্মী। আজকের ঘটনাটি শুধু আমার জন্য অপমানজনক নয়, এটা পুরো সাংবাদিক সমাজের প্রতি অপমান।”

সংবাদ সম্মেলনের আসল উদ্দেশ্য ম্লান হয়ে যায় নারী বিদ্বেষে

সংবাদ সম্মেলনের মূল আলোচ্য ছিল বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ঘিরে চলমান এক আদালত মামলাকে কেন্দ্র করে। সেখানে ফয়জুল করিম অভিযোগ তোলেন যে, আগের নির্বাচনে ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের অধীনে তারা ন্যায্য বিচার পাননি। তিনি বলেন,
“বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন কখনোই সুষ্ঠু হয়নি। আমরা হাতপাখা প্রতীকে নির্বাচন করেছি, কারণ সে সময়ের প্রধান নির্বাচন কমিশনার সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন।”

তিনি আরও যোগ করেন,
“ঢাকা দক্ষিণ সিটি ও চট্টগ্রাম সিটির নির্বাচনে আমাদের প্রার্থীরা আদালতের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পেয়েছেন। তাই আমরা এবারও আদালতের প্রতি আস্থা রাখছি।”

তবে বরিশাল আদালত চত্বরে চরমোনাই অনুসারীদের আগে করা অবরোধ ও বিশৃঙ্খলার প্রসঙ্গে সমালোচনা উঠে এলে ফয়জুল করিম জানান,
“আমরা এখন শান্তিপূর্ণভাবে এগোতে চাই। সোমবার রাজপথে কোনো কর্মসূচি নেই, আমি আমার কর্মীদের সে নির্দেশনা দিয়েছি।”

নারী সাংবাদিক বিতাড়নের ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে প্রতিক্রিয়া

মনিকা চৌধুরীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় বরিশালের সাংবাদিক সমাজে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। সাংবাদিকরা বলছেন,
“একজন নারী সাংবাদিককে কেবল তার লিঙ্গ পরিচয়ের কারণে সংবাদ সম্মেলন থেকে বের করে দেওয়া শুধু অবমাননাকর নয়, এটি সাংবিধানিক অধিকার ও সাংবাদিকতার নীতির পরিপন্থী।”

বরিশাল প্রেসক্লাবের সিনিয়র এক সদস্য বলেন,
“সংবাদ সম্মেলন মানে উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম, যেখানে সব গণমাধ্যম প্রতিনিধি থাকতে পারেন। সেখানে নারী-পুরুষের বিভাজন করে সাংবাদিককে তাড়িয়ে দেওয়া গণতন্ত্র ও স্বাধীন মতপ্রকাশের চরম লঙ্ঘন।”

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নারীর পেশাগত নিরাপত্তা, সাংবাদিকদের সম্মান এবং মৌলবাদী দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে।

コメントがありません


News Card Generator