ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নির্বাচিত মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে আজকের মধ্যেই শপথবাক্য পাঠ করাতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এই নোটিশটি পাঠিয়েছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন।
এই আইনি পদক্ষেপ এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ইশরাক হোসেনের মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণে সরকারের ‘নীরবতা’ ও বিলম্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। হাইকোর্ট ইতিমধ্যেই স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে—ইশরাকের শপথে কোনো আইনি বাধা নেই।
শপথ না পড়ানোর রিট খারিজ, আপিলে আবেদন
এর আগে ২২ মে একটি রিট পিটিশনে দাবি করা হয়েছিল, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণে স্থগিতাদেশ দেওয়া হোক। তবে হাইকোর্ট রিটটি সরাসরি খারিজ করে দেয় এবং জানায়, এটি ‘শুনানিযোগ্য নয়’। আদালতের এমন মন্তব্যের পর আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন আর কোনো বৈধ কারণ নেই যার কারণে ইশরাককে শপথ দেওয়া যাবে না।
তবে এখানেই থেমে থাকেননি রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম মুসা। তিনি হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেছেন। তার ভাষায়, “এই আবেদনটি শুনানির জন্য চেম্বার বিচারপতির আদালতে উঠতে পারে।”
সরকারের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে বিএনপি শিবির
ইশরাক হোসেনের পক্ষে এবার আইনজীবীরা সরাসরি সরকারকে চাপ প্রয়োগ করছেন। মাহবুব খোকনের পাঠানো আইনি নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, হাইকোর্টের রায়ে কোনো বাধা না থাকায় আজকের মধ্যেই শপথ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক। নোটিশে বলা হয়, “শপথ গ্রহণে অযথা বিলম্ব করা হলে তা হবে আদালতের নির্দেশনার অমান্য।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি কেবল একটি আইনি লড়াই নয়, বরং রাজনৈতিকভাবেও সরকারের ওপর একটি কৌশলগত চাপ প্রয়োগ। একদিকে সরকারের নীরবতা, অন্যদিকে বিএনপির আইনি-রাজনৈতিক তৎপরতা, বিষয়টিকে এখন এক নতুন উত্তেজনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।
ইশরাকের অবস্থান ও বিএনপির বার্তা
ইশরাক হোসেন এর আগেও বলেছেন, “আমি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। আদালত স্পষ্ট করে দিয়েছে—আমার শপথে কোনো বাধা নেই। তাহলে বিলম্ব কেন?” বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে সময়ক্ষেপণ করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে দমন করতে চাইছে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি সরকার আজকের মধ্যে শপথ না করায়, তাহলে ইশরাকের পক্ষ থেকে আরও বড় আইনি কিংবা রাজনৈতিক পদক্ষেপ আসতে পারে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ইশরাক হোসেনকে নিয়ে চলমান এই আইনি ও রাজনৈতিক নাটক এখন এক নতুন মোড়ে। সরকারের সামনে এখন দুটি পথ—আজই শপথ করানো, অথবা আদালতের অবমাননার অভিযোগের মুখোমুখি হওয়া। পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে, তা নির্ভর করছে আজকের দিনটির ওপর।