close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনায় বসবে জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটেন..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার মধ্যেই পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় বসছে ইউরোপের তিন প্রধান দেশ। শুক্রবার জেনেভায় হতে যাচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত এই বৈঠক, যেখানে ইরানকে শান্তিপূর্ণ পথের প্রতিশ্রুতি দিতে চাপ দেবে..

মধ্যপ্রাচ্যে যখন যুদ্ধের দামামা বাজছে, তখন পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ হয়ে উঠার আগেই ইউরোপীয় নেতারা এক কূটনৈতিক উদ্যোগ নিচ্ছেন। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় বসার পরিকল্পনা করেছে ইউরোপের তিন প্রভাবশালী দেশ—জার্মানি, ফ্রান্স এবং ব্রিটেন

আসন্ন শুক্রবার (২১ জুন) এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে জেনেভায়, যেখানে আলোচনা শুরু হবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক কাজা কালাস-এর সঙ্গে একটি প্রস্তুতিমূলক বৈঠকের মধ্য দিয়ে। এরপর তেহরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনা হবে বলে জানিয়েছে জার্মান কূটনৈতিক সূত্র।

বিশ্লেষকদের মতে, এই আলোচনার উদ্দেশ্য দ্ব্যর্থহীন—ইরানকে কূটনৈতিকভাবে চাপে রাখা এবং নিশ্চিত করা যে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হবে।

সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে ইরান-ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা। ইসরায়েল গত সপ্তাহে তেহরানের বেশ কিছু সামরিক ও পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র লক্ষ্য করে বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে। এর জবাবে ইরান ইসরায়েল লক্ষ্য করে ছুড়েছে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র।

এই যুদ্ধাবস্থার মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র প্রসঙ্গটি নতুন করে সামনে এসেছে। ইসরায়েলের দাবির বিপরীতে ইরান বারবার বলছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ গবেষণার জন্য, কোনো সামরিক উদ্দেশ্যে নয়। তবে ইসরায়েল বরাবরই দাবি করে আসছে, ইরান গোপনে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে।

এই পরিস্থিতিতে আলোচনার পথে হেঁটে সংকট নিরসনের চেষ্টাকে অনেকেই স্বাগত জানালেও, অনেক বিশ্লেষক এটিকে দেখছেন একধরনের 'কূটনৈতিক চাপের খেলাও' হিসেবে।

জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ পারমাণবিক ইস্যুতে ইসরায়েলের পক্ষাবলম্বন করে উত্তেজনা আরও বাড়িয়েছেন। তিনি সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, "ইরান যদি এখনো উত্তেজনা কমাতে ব্যর্থ হয়, তবে তাদের আরও কঠিন এবং ধ্বংসাত্মক পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।"

অন্যদিকে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়াডেফুল তুলনামূলকভাবে কূটনৈতিক ভাষায় ইরানকে আলোচনায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আশ্বস্ত করার মাধ্যমে সমাধানের পথেই থাকতে হবে। আলোচনার দরজা সবসময় খোলা রয়েছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পর একটি বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের গঠনমূলক সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে পারমাণবিক তত্ত্বাবধান, পর্যবেক্ষণ এবং ভবিষ্যতের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হবে।

সূত্র বলছে, ইরানের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক হলেও আলোচনা হবে কড়া নজরদারিতে। ইউরোপীয় নেতারা চাইছেন, ইরান তাদের পরমাণু কর্মসূচির স্বচ্ছতা আন্তর্জাতিকভাবে প্রমাণ করুক, এবং ২০১৫ সালের চুক্তির শর্তগুলো কার্যকরভাবে পুনর্বহাল করুক।

এই আলোচনার পটভূমিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো স্পষ্টভাবে জানাননি, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে সরাসরি অংশ নেবে কিনা। ট্রাম্পের এই নীরবতা অনেক বিশ্লেষকের কাছে অশনিসংকেত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র যদি সরাসরি হস্তক্ষেপ করে, তাহলে পুরো মধ্যপ্রাচ্য আরও অস্থির হয়ে উঠবে।

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত যেমন তীব্র, তেমনি তা বিশ্বশান্তির জন্যও ভয়াবহ হুমকি। পারমাণবিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়া এই সংঘাত ঠেকাতে ইউরোপীয় পরাশক্তিরা শেষ মুহূর্তে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে চায়। এখন দেখার বিষয়—তেহরান এই আহ্বানে কীভাবে সাড়া দেয়।

শান্তি আসবে কূটনীতির পথে, না কি যুদ্ধের দামামাই হবে শেষ সিদ্ধান্ত—সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।

Keine Kommentare gefunden