ইরানের পক্ষ নিলো আরও এক মুসলিম দেশ

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার মধ্যেই কাতার স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিল—ইরানের বিরুদ্ধে হামলার প্রতিবাদে তারা ইসলামী প্রজাতন্ত্রের পাশে রয়েছে। কাতারের আমিরের সরাসরি বার্তা অঞ্চলজুড়ে নতুন কূটনৈতিক মাত্রা এনে দিয়েছে।..

মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে নতুন করে উত্তেজনার আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সামরিক উত্তাপের পারদ চড়ছে প্রতিদিন, আর সেই উত্তাপে যুক্ত হচ্ছে একের পর এক নতুন পক্ষ। এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ইরানের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে কাতার। মুসলিম বিশ্বের অন্যতম ধনী ও প্রভাবশালী এই দেশ এবার সরাসরি জানিয়ে দিল—তারা ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে।

শনিবার (১৪ জুন) সন্ধ্যায় কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি ইরানের সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করেন। সেই ফোনালাপেই আমির স্পষ্ট করেন, “ইসরায়েলের যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইরান আত্মরক্ষার অধিকার রাখে। কাতার ইরানের সার্বভৌমত্ব এবং আত্মরক্ষার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে।”

 

ফোনালাপে প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান বলেন, “আমার সরকারের মূল লক্ষ্য ছিল মুসলিম এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা, যাতে এই অঞ্চল আরও শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল হয়। কিন্তু শুরু থেকেই জায়নিস্ট শক্তিগুলো এই অঞ্চলে বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতা সৃষ্টি করে চলেছে।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র এই আগ্রাসনে পরোক্ষভাবে সহায়তা করছে এবং পুরো অঞ্চলের ওপর আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে চাপ প্রয়োগ করছে। তবে ইরান কোনো চাপের কাছে নত হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।

 

কাতারের আমির শেখ তামিম বলেন, “আমরা ইরানের জনগণের সাহসিকতা ও সার্বভৌম সিদ্ধান্তকে সম্মান করি। আলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে সংকট সমাধানের পক্ষে আমরা, কিন্তু আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সময়ের দাবি।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোকেও এই অবস্থান সম্পর্কে অবহিত করছি এবং আশা করি মুসলিম বিশ্ব সম্মিলিতভাবে এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদ জানাবে।”

 

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (১২ জুন) ইসরায়েল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে একটি হঠাৎ সামরিক অভিযান চালায় ইরানের উপর। এই অভিযানে রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি, পরমাণু স্থাপনা ও আবাসিক এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। হামলায় প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।

এর জবাবে শুক্রবার (১৩ জুন) রাতে ইরান ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩’ চালায়। ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এটি ছিল একটি পূর্ণ প্রতিশোধমূলক অভিযান এবং এর মাধ্যমে তারা ইসরায়েলের আক্রমণের সমুচিত জবাব দিয়েছে।

দুই পক্ষের এই পাল্টাপাল্টি হামলার কারণে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধাবস্থার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক পরিসরে তীব্র কূটনৈতিক টানাপোড়েনের পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে।

 

বিশ্লেষকরা বলছেন, কাতারের এই অবস্থান একদিকে যেমন মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে সংহতির বার্তা দিচ্ছে, অন্যদিকে পশ্চিমা শক্তিগুলোর জন্য এক ধরনের কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল চায়, এই অঞ্চল ইরানবিরোধী একটি জোটে পরিণত হোক। কিন্তু কাতারের মতো দেশের স্পষ্ট অবস্থান সেই পরিকল্পনায় বড় ধাক্কা।

এখন প্রশ্ন হলো, এই অবস্থানের পর অন্যান্য মুসলিম দেশগুলো কী করবে? সৌদি আরব, তুরস্ক কিংবা মালয়েশিয়া—তারা কি কাতার ও পাকিস্তানের পথ অনুসরণ করবে, নাকি চুপ থাকবে?

 

ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষ কেবল দুই দেশের ব্যাপার নয়, এটি এখন পরিণত হয়েছে মুসলিম বিশ্বের সম্মান, নিরাপত্তা এবং ন্যায়ের প্রশ্নে। কাতারের এই ঘোষণা শুধু রাজনৈতিক বার্তা নয়—এটি মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিতে একটি স্পষ্ট সিগন্যাল। সামনে কী হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Nenhum comentário encontrado


News Card Generator