সম্প্রতি ইসরায়েল দাবি করেছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের মজুদ দিন দিন কমে আসছে। তাদের মতে, এই কারণে ইরান এখন কম সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করছে। তবে এই দাবিকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও কৌশলগত অপপ্রচার হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান। তেহরান জানায়, এটি কোনো ‘মজুদের ঘাটতি’ নয়, বরং একটি নতুন যুগের সূচনা—যেখানে ‘সংখ্যা’ নয়, ‘নিখুঁত আঘাত’ই আসল।
একজন জ্যেষ্ঠ ইরানি কর্মকর্তা সিএনএনকে জানান, “আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রের মজুদ এখনো বিপুল। আমরা সংখ্যা দিয়ে নয়, এখন মানের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। লক্ষ্যভেদে নির্ভুল ক্ষেপণাস্ত্রই এখন আমাদের মূল অস্ত্র।”
এই বক্তব্য ইসরায়েলের কৌশলগত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে বলেই মত আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, “আমরা একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছি, যা মার্কিন THAAD, প্যাট্রিয়ট, ইসরায়েলের আয়রন ডোম, ডেভিড স্লিং, অ্যারো-২ ও অ্যারো-৩ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে।”
এই বক্তব্যে বিশ্বজুড়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে। প্রযুক্তিগতভাবে এত শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করা কি আদৌ সম্ভব? যদিও এখনো এ দাবির স্বাধীন কোনো প্রমাণ মেলেনি, তবে সাম্প্রতিক হামলা ও প্রতিরোধ ব্যর্থতার কিছু নজির আছে যা ইরানের বক্তব্যকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান সম্ভবত নতুন যুদ্ধনীতির দিকে এগোচ্ছে। এই নীতির মূল হল: “Precision over volume”—অর্থাৎ বহু ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ না করে, কম সংখ্যক অথচ ভয়ঙ্করভাবে নির্ভুল ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার।
তারা বলছে, একদিকে এতে খরচ বাঁচে, অন্যদিকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করে শত্রুর মনোবলে আঘাত হানা যায়। এটি একটি চতুর ও টেকসই সামরিক কৌশল।
ইরানি কর্মকর্তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “আমরা ক্ষেপণাস্ত্র কম নিক্ষেপ করছি বলে কেউ যেন এটিকে আমাদের দুর্বলতা মনে না করে। বরং এখন একেকটি ক্ষেপণাস্ত্রই যুদ্ধের ভারসাম্য বদলে দিতে পারে।তারা আরও বলেন, ইসরায়েল যেন ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা দেখে স্বস্তি না পায়। কারণ এখন ইরান যে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ছে, তা শুধু ধ্বংস নয়, কৌশলগত বার্তাও বহন করছে।
এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মিত্ররা বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ইসরায়েল বা ইরানের মধ্যে সরাসরি বড় কোনো সংঘর্ষ ঘটলে, সেটি এক অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না—ছড়িয়ে পড়বে পুরো বিশ্বে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের কৌশলগত বার্তা এবং ইসরায়েলের পাল্টা মন্তব্যের মাঝে নতুন ধরণের যুদ্ধের ইঙ্গিত স্পষ্ট—যেখানে প্রযুক্তি, কৌশল এবং মনস্তাত্ত্বিক চাপ বড় ভূমিকা রাখবে।
ইরানের এই অবস্থান থেকে একটি বার্তাই স্পষ্ট—তারা যুদ্ধ চায় না, কিন্তু কেউ যুদ্ধ চাপিয়ে দিলে, তেহরান আর ‘সংখ্যা’ নয়, ‘নিখুঁত আঘাতে’ সব জবাব দেবে। ইসরায়েল এবং তার মিত্ররা হয়ত মজুদ দেখে স্বস্তি পাচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে সেই স্বস্তির নিচে জমে উঠছে এক নতুন যুদ্ধ-প্রবণতার আগুন।
পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে—তা নির্ধারণ করবে আগামী কয়েকটি দিন। তবে এইটুকু নিশ্চিত—মধ্যপ্রাচ্যের আকাশ এখন আর আগের মতো নেই।