ইরানের মিসাইল হামলায় বিধ্বস্ত ইসরায়েলের বৃহৎ তেল পরিশোধনাগার, নিহত ৩..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইরানের ভয়াবহ মিসাইল হামলায় ইসরায়েলের হাইফা উপকূলে অবস্থিত অন্যতম বৃহৎ তেল পরিশোধনাগার সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। নিহত হয়েছেন তিনজন কর্মী, কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ — মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা চরমে।..

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার আগুনে ঘি ঢেলে এবার সরাসরি কৌশলগত হামলায় ইরান। সোমবার (১৬ জুন) রাতে ইরানের ছোড়া একাধিক দূরপাল্লার মিসাইল আঘাত হানে ইসরায়েলের হাইফা উপকূলে অবস্থিত একটি বৃহৎ তেল পরিশোধনাগারে। বিস্ফোরণে পরিশোধনাগারটি সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়ে যায়। নিহত হন তিনজন শ্রমিক। ইসরায়েলের ভেতর এত বড় পরিসরের এই হামলা দেশটির জন্য কৌশলগত বিপর্যয়ের শামিল বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

পরিশোধনাগারটি পরিচালনাকারী বাজান গ্রুপ মঙ্গলবার (১৭ জুন) এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানায়,

হামলার ফলে আমাদের অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রেও বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। আমরা পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছি।”

এই বিবৃতি পাঠানো হয় ইসরায়েলের তেলআবিব স্টক এক্সচেঞ্জে, যেখানে কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা বাজারে বড় ধস নামানোর ইঙ্গিত দেয়।

পরিশোধনাগারটির অবস্থান হাইফা উপকূলে, যা দীর্ঘদিন ধরে ‘সুরক্ষিত অঞ্চল’ হিসেবে চিহ্নিত। কিন্তু এবারই প্রথমবার, এত বড় ও সরাসরি হামলার শিকার হলো ইসরায়েলের এই তেল পরিশোধনাগার। এর আগে লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী বিভিন্ন সময় হামলার হুমকি দিলেও, বাস্তবে এমন হামলা কখনো কার্যকর হয়নি।

বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনাকে যুদ্ধের নতুন ধাপে নিয়ে যাচ্ছে। এমন এক সময়ে এই হামলা সংঘটিত হলো, যখন গাজা, লেবানন ও সিরিয়া অঞ্চলেও সামরিক অস্থিরতা চলমান।
ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অবকাঠামোর ওপর এমন সফল আঘাত গোটা অঞ্চলে নিরাপত্তার ভারসাম্যকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এখনও সীমিত হলেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনৈতিক চ্যানেলে টানটান উত্তেজনা লক্ষ করা যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইসরায়েল খুব দ্রুত প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিতে পারে। তবে তা কতটা বিস্তৃত হবে, তা নির্ভর করছে পরবর্তী কূটনৈতিক ও সামরিক পরিস্থিতির ওপর।

হাইফা পরিশোধনাগার শুধু ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ জ্বালানি চাহিদা নয়, কিছু সীমিত রপ্তানিও সরবরাহ করত। এই পরিশোধনাগারের মাধ্যমে ইসরায়েল তার কৌশলগত জ্বালানি মজুত গড়ে তুলতো, যা এখন মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে।
তেল পরিশোধনাগারটি ধ্বংস হওয়ার ফলে একদিকে যেমন জ্বালানি সরবরাহে সংকট দেখা দিতে পারে, অন্যদিকে বাজারেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

এ হামলা শুধু একটি অবকাঠামো ধ্বংস নয়— এটি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সক্ষমতা, তথ্য গোয়েন্দা কাঠামো এবং আঞ্চলিক আধিপত্যের ওপর সরাসরি প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি ইরান চায়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাকে তারা টার্গেট করতে পারে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে:
ইসরায়েল কি সরাসরি ইরানের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ ঘোষণা করবে? নাকি আরও জটিল এক স্নায়ুযুদ্ধে পা বাড়াবে মধ্যপ্রাচ্য?

ইরানের এই মিসাইল হামলা শুধু ইসরায়েলের ভৌগোলিক গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে এক নতুন সংঘাতময় দিগন্তে নিয়ে যেতে পারে — যার পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ।

Nenhum comentário encontrado