close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

ইরানে পারমাণবিক স্থাপনার পাশে ভূমিকম্প না পরীক্ষা ,রেভল্যুশনারি গার্ডকে ঘিরে রহস্যে কাঁপছে বিশ্ব!..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইসরায়েলের হামলার ছায়ায় ইরানের পারমাণবিক ঘাঁটির কাছে আচমকা ভূমিকম্প! প্রকৃত দুর্যোগ, না কি গোপন পরীক্ষা? রেভল্যুশনারি গার্ডকে ঘিরে উঠে আসছে বিস্ফোরক সন্দেহ—ঘটনার গভীরে কী সত্য?..

ইসরায়েলের একের পর এক বিমান হামলার উত্তেজনাকর মুহূর্তে ইরানে ঘটে গেল এক অভূতপূর্ব ঘটনা। দেশটির উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত একটি পারমাণবিক স্থাপনার একেবারে নিকটে আঘাত হেনেছে একটি ৫.১ মাত্রার ভূমিকম্প। তবে শুধু ভূমিকম্প নয়, এই ঘটনার পেছনে ইঙ্গিত মিলছে আরেকটি বড়সড় ‘পরীক্ষা’র—যা ইতিমধ্যেই নড়েচড়ে বসিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলকে।

এই ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ইরানের সেমনান শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে, যেখান থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরেই রয়েছে কোম প্রদেশের আলোচিত ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনা। এই জায়গাটিকে ইরানের অন্যতম সংবেদনশীল এবং কৌশলগত অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যেখানে অতীতে একাধিকবার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চালানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (USGS) জানিয়েছে, ভূমিকম্পটি মাটির ১০ কিলোমিটার গভীরে সংঘটিত হয়। অন্যদিকে, ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাসনিম জানায়, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫.২। যদিও প্রাথমিকভাবে এই কম্পনের কারণে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি, কিন্তু পুরো তেহরান অঞ্চলজুড়ে মানুষ এক অজানা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।

ভূমিকম্পের কম্পন ছড়িয়ে পড়ে রাজধানী তেহরান পর্যন্ত। প্রায় ১৪৫ মাইল দূরের এই শহরের বাসিন্দারাও কম্পন অনুভব করেন। যদিও সরকারিভাবে কোনো হতাহতের ঘটনা নিশ্চিত করা হয়নি, তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছিল প্রবল। ইরানের সিভিল ডিফেন্স সংস্থাও সতর্কতামূলক অবস্থানে ছিল কিছু সময়ের জন্য।

এই ভূমিকম্প ঘিরে সবচেয়ে বিস্ফোরক দাবি উঠে এসেছে ইরানেরই এক ব্লগারের টেলিগ্রাম চ্যানেল থেকে। সেখানে ইঙ্গিত দেওয়া হয়, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (IRGC) হয়তো ফর্দো পারমাণবিক এলাকায় কোনো ‘গোপন পরীক্ষা’ চালাচ্ছিল। আর সেই পরীক্ষার ফলেই এই ভূকম্পনের সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে!

এই দাবিকে ঘিরে ছড়িয়ে পড়েছে জল্পনা—যদি সত্যিই কোনো সামরিক বা পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো হয়ে থাকে, তাহলে তা আন্তর্জাতিক আইনের চোখে গুরুতর লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে। বিশেষ করে এমন সময়, যখন ইসরায়েলের সঙ্গে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে ইরান বহুবার আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়েছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম Mirror US এই গুজবকে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরে জানায়, এ ধরণের ঘটনাকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘর্ষের মধ্যেই ইরানের পারমাণবিক নীতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। আর এমন একটি অঞ্চলে আকস্মিক ভূমিকম্প হলে সন্দেহ তো উঠবেই।

পাশাপাশি, পশ্চিমা দেশগুলোও এখন গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখছে আদৌ সেখানে বিস্ফোরণ জাতীয় কিছু ঘটেছিল কি না। কারণ ভূমিকম্প এবং ভূগর্ভস্থ বিস্ফোরণের মাত্রা প্রায় একরকম হলেও, বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই পার্থক্য শনাক্ত করা সম্ভব।

এখনও পর্যন্ত ইরানের সরকারিভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তারা ভূমিকম্পটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলেই দেখাতে চাইছে। কিন্তু সাধারণ জনগণ ও স্থানীয় পর্যায়ের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা বলছেন অন্য কথা। তাদের দাবি, এমন ভূকম্পন এর আগে কখনও দেখা যায়নি, এবং কম্পনের ধরণ ছিল ‘অস্বাভাবিক’।

বিশ্ববাসী এখন চোখ রাখছে ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনায়। ২০১৫ সালের পর থেকে ইরান তার পারমাণবিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রতিশ্রুতি দিলেও, সাম্প্রতিক সময়ে সেই প্রতিশ্রুতি আর কার্যকর নেই বলেই অভিযোগ উঠছে।

এমন পরিস্থিতিতে যদি সত্যিই রেভল্যুশনারি গার্ড কোর কোনো গোপন সামরিক পরীক্ষা চালিয়ে থাকে, তবে তা শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য এক অশনি সংকেত।

এই ঘটনা আদৌ একটি ভূমিকম্প, না কি গোপন সামরিক কার্যক্রমের পরিণতি—তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট, ইরান যেন ধীরে ধীরে আবার সেই চিরচেনা পারমাণবিক উত্তেজনার দিকেই হাঁটছে। আর তাতে পুরো বিশ্ব শঙ্কিত হয়ে তাকিয়ে আছে ফর্দো ঘাঁটির দিকে।

Nema komentara