ইরানের রাজধানী তেহরান যেন রোববার পরিণত হয়েছিল এক ঐতিহাসিক প্রতিবাদের মঞ্চে। যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলার বিরুদ্ধে মুখর হয়ে ওঠে হাজার হাজার সাধারণ নাগরিক। আর এই বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে তেহরানের ইনকিলাব স্কয়ার—যেখানে শামিল হন দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান নিজেও।
জনতার কণ্ঠে গর্জে ওঠে প্রতিশোধের আহ্বান, জাতীয়তাবাদের জাগরণ। সিএনএনের প্রতিবেদনে জানা যায়, বিক্ষোভের সময় ইনকিলাব স্কয়ারজুড়ে মুখর ছিল "আমেরিকা ধ্বংস হোক", "ইসরায়েল নিপাত যাক"—এমন নানা স্লোগানে। অনেকের হাতে ছিল ইরানের জাতীয় পতাকা। একাংশের হাতে দেখা যায় শক্তিশালী বার্তা বহনকারী প্ল্যাকার্ড— "ইরান আমাদের মাতৃভূমি", "তার মাটি আমাদের সম্মান", "তার পতাকা আমাদের কাফন"।
বিক্ষোভে প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের উপস্থিতি ছিল পুরো ঘটনার সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক। তেহরানবাসীর সঙ্গে সরাসরি একাত্মতা প্রকাশ করে তিনি বুঝিয়ে দেন—এই লড়াই শুধুই রাজনৈতিক নেতৃত্বের নয়, এটি গোটা জাতির আত্মপরিচয়ের লড়াই।
মেহের নিউজ এজেন্সির খবরে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট একাধিকবার বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে হাত নাড়িয়ে অভিবাদন জানান এবং তাদের দাবি সমর্থন করেন। তার অংশগ্রহণ ইরানিদের মধ্যে সাহস ও মনোবল আরও বৃদ্ধি করে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে যে টানাপোড়েন বহু দশক ধরে চলেছে, এবারের এই সরাসরি প্রতিবাদ এবং রাষ্ট্রপ্রধানের অংশগ্রহণ নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই বিক্ষোভ কেবল একটি ঘটনার প্রতিক্রিয়া নয়, এটি ইরানের জাতীয়তাবাদের নবজাগরণ।
এই মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট নিজে রাস্তায় নেমে জনগণের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করা কেবল প্রতীকী নয়, এটি একটি স্পষ্ট বার্তা—ইরান কোনো অবস্থাতেই মাথা নত করবে না।
বিশ্বব্যাপী মিডিয়াগুলো এই ঘটনাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বিক্ষোভ কেবল যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলের বিরোধিতাই নয়, বরং এটি ইরানের ভেতরে থেকে আত্মবিশ্বাসের পুনর্জাগরণ। প্রেসিডেন্টের সক্রিয় অংশগ্রহণ ইঙ্গিত দিচ্ছে, সরকার-জনগণ এখন একই কণ্ঠে কথা বলছে।
এদিকে মার্কিন নীতিনির্ধারকদের মধ্যে এ ঘটনায় উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন আগ্রাসনবিরোধী মনোভাব আরও জোরালো হবে বলেই মনে করছেন অনেকে।
তেহরানের ইনকিলাব স্কয়ারের রোববারের এই দৃশ্য শুধু একটি রাজনৈতিক প্রতিবাদ নয়, এটি ছিল জাতীয় মর্যাদা রক্ষার এক সংহত দৃপ্ত উচ্চারণ। রাষ্ট্রপ্রধানের নেতৃত্বে, জনগণের সম্মিলিত কণ্ঠে ফুটে উঠেছে একটি স্পষ্ট বার্তা— ইরান মাথা নত করে না।
বর্তমানে বিশ্ব রাজনীতির যে উত্তপ্ত মঞ্চে ইরান অবস্থান করছে, সেখানে এই ধরনের অভ্যন্তরীণ ঐক্য ভবিষ্যতের কৌশলগত পদক্ষেপে বড় ভূমিকা রাখবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।



















