রাশিয়া হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর ইসরায়েলি হামলা বন্ধ না হলে তার ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে। মস্কো জানিয়েছে, ইরানে কর্মরত রুশ বিশেষজ্ঞদের জীবন আজ হুমকির মুখে। এসব হামলা বন্ধ না করলে রাশিয়া তা সহ্য করবে না এবং পরিস্থিতির জবাব আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক কাঠামোতে নয়, বরং আরও কড়া রূপে দিতে বাধ্য হতে পারে।
বৃহস্পতিবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক অবকাঠামোর ওপর ইসরায়েলের এ ধরনের আগ্রাসন পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য, আন্তর্জাতিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি। বিশেষত বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে অবস্থান করা রুশ বিজ্ঞানীরা এখন সরাসরি আক্রমণের শঙ্কায় রয়েছেন।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা সেন্ট পিটার্সবার্গ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামে (SPIEF) এক ব্রিফিংয়ে বলেন,-আমরা স্পষ্টভাবে জানাচ্ছি,- এই ধরনের হামলা ইরানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে একেবারে ভেঙে ফেলছে। একে বিনা উসকানিতে সামরিক আগ্রাসন ছাড়া কিছুই বলা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, -বিশ্ব এখন এমন এক সংকটের মুখে, যেখানে একটি ভুল সিদ্ধান্ত পারমাণবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। আমাদের বিজ্ঞানীরা যারা শান্তিপূর্ণ গবেষণা করছেন, তাদের নিরাপত্তা রক্ষা করা রাশিয়ার জন্য অগ্রাধিকার।
যুক্তরাষ্ট্রকেও তীব্র বার্তা মস্কোর
রাশিয়া শুধু ইসরায়েল নয়, যুক্তরাষ্ট্রকেও প্রকাশ্যে সতর্ক করেছে। জাখারোভা বলেন,-আমরা ওয়াশিংটনকে আহ্বান জানাচ্ছি, যেন তারা কোনোভাবেই এই সংঘর্ষে সামরিকভাবে জড়ায় না। এর পরিণতি হতে পারে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত এবং বিশ্ব শান্তির জন্য চরম হুমকি।
মস্কোর মতে, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরায়েলের পাশে থেকে ইরানে যেকোনো সামরিক সহযোগিতা দেয়, তবে আঞ্চলিক যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠবে। রাশিয়ার কূটনৈতিক শীর্ষমহল এই সংঘর্ষকে ‘পৃথিবীর জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক পর্বের শুরু’ বলে অভিহিত করেছে।
বুশেহর রিঅ্যাক্টরে নজরদারি জোরদার
বর্তমানে ইরানের বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে শতাধিক রুশ বিশেষজ্ঞ কাজ করছেন। তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে রাশিয়া এখন ভীষণ উদ্বিগ্ন।
তারা জানিয়েছে,-আমরা আমাদের বিজ্ঞানীদের সুরক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে এমন হামলা চলতে থাকলে বিশ্ব সম্প্রদায়কে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে।
এদিকে রাশিয়ার এই বক্তব্যকে সমর্থন করেছে চীন ও কিছু ইউরোপীয় রাষ্ট্র। জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে জরুরি বৈঠকের আহ্বান এসেছে।
আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া যেভাবে সরাসরি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দিয়েছে, তা বর্তমান ভূরাজনীতিতে এক নতুন মোড় আনতে পারে। কেউ কেউ বলছেন,-এটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক-পর্যায়ের ইঙ্গিত হতে পারে, যদি বিষয়টি দ্রুত সমাধান না করা হয়।
রাশিয়ার তীব্র প্রতিক্রিয়া শুধু রাজনৈতিক বক্তব্য নয়—এটি বাস্তবসম্মত হুঁশিয়ারি, যা কূটনৈতিক শিরোনাম পেরিয়ে সামরিক প্রস্তুতির দিকেও ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নতুন নয়, কিন্তু এবার যে বিষয়টি ভিন্ন তা হলো রুশ বিশেষজ্ঞদের সরাসরি সম্পৃক্ততা এবং রাশিয়ার প্রকাশ্য হুমকি।
এই সংঘাত যদি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আসে, তবে তা শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়—পুরো পৃথিবীকে এক ভয়ানক বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিতে পারে।



















