ইনিংস ব্যবধানে হারল বাংলাদেশ

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
মাত্র ৩৪ বলেই গুটিয়ে গেল দ্বিতীয় ইনিংস, ইনিংস ও ৭৮ রানে শ্রীলঙ্কার কাছে লজ্জার হার বাংলাদেশের। ব্যাটিং বিপর্যয় যেন তলানিতে ঠেলে দিল টেস্ট আত্মবিশ্বাস।..

বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে আরেকটি বিব্রতকর পরাজয়ের দিন ছিল আজ। কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ইনিংসে ব্যাটিং ব্যর্থতার চূড়ান্ত মূল্য দিতে হয়েছে টাইগারদের। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে মাত্র ৩৪ বলেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস। ফলাফল—ইনিংস ও ৭৮ রানের বিশাল পরাজয়। টেস্টে ব্যাটিং ধস, আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি এবং লড়াইয়ের অভাবে দারুণভাবে হোঁচট খেলো বাংলাদেশের টেস্ট যাত্রা।

তৃতীয় দিনেই ম্যাচের রূপরেখা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশ ছিল ৬ উইকেটে ১১৫ রানে। তখনো তারা পিছিয়ে ছিল ৯৬ রানে, হাতে মাত্র ৪ উইকেট। ইনিংস পরাজয় এড়াতে হলে প্রয়োজন ছিল জাদুকরি ব্যাটিংয়ের। কিন্তু আজ চতুর্থ দিন সকালে যা দেখা গেল তা ছিল আরও বিপর্যয়ের গল্প।

দলের শেষ ভরসা ছিলেন লিটন দাস। তিনি স্বীকৃত শেষ ব্যাটার হিসেবে উইকেটে ছিলেন। কিন্তু প্রবাথ জয়াসুরিয়ার বল লিটনের ব্যাট ছুঁয়ে উইকেটরক্ষক কুশল মেন্ডিসের হাতে জমা পড়তেই শেষ আশার বাতি নিভে যায়। লিটন করেন ৪৩ বলে মাত্র ১৪ রান।

তার আউটের সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশের ইনিংস ধসে পড়ে। শেষ চার উইকেটের পতনে যোগ হয় মাত্র ১৮ রান। সব মিলিয়ে চতুর্থ দিনের সকালটা বাংলাদেশ শিবিরের জন্য একেবারেই দুঃস্বপ্ন হয়ে আসে।

গল টেস্টে যে আত্মবিশ্বাস দেখা গিয়েছিল বাংলাদেশের ব্যাটারদের মাঝে, কলম্বোতে এসে তা একেবারেই উধাও হয়ে যায়। প্রথম ইনিংসে ২১১ রানে পিছিয়ে পড়েই দলটি কোণঠাসা হয়ে পড়ে। দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকলেও ব্যাটাররা সেটি কাজে লাগাতে পারেননি। একজন ব্যাটারও দায়িত্বশীল ইনিংস খেলতে পারেননি।

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল হতাশাজনক। দ্বিতীয় ইনিংসে ছিল আরও ভঙ্গুর। এই সিরিজে লঙ্কান স্পিনার প্রবাথ জয়াসুরিয়া এবং পেসার লাহিরু কুমারা বারবার আঘাত হানেন। বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্যে স্পিন মোকাবিলার কোনো প্রস্তুতি কিংবা টেম্পারমেন্ট দেখা যায়নি।

বারবার বিদেশের মাটিতে এমন লজ্জার হারের পর প্রশ্ন উঠছে টেস্ট দলের মানসিক প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা নিয়ে। দেশের মাটিতে মাঝেমধ্যে ভালো খেললেও বিদেশে গিয়ে স্পিন কিংবা পেস—কোনোটারই সঠিক মোকাবিলা করতে পারছে না বাংলাদেশ।

ক্রিকেটবোদ্ধারা বলছেন, এই হারের দায় কেবল খেলোয়াড়দের নয়, দলের স্ট্র্যাটেজি ও ব্যবস্থাপনায়ও বড় ঘাটতি রয়েছে। ব্যাটিং ইউনিটে বারবার ব্যর্থতা দেখা গেলেও, সেটি কাটিয়ে ওঠার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না।

এই হারের ফলে দুই ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতে নিল শ্রীলঙ্কা। তাদের দাপুটে পারফরম্যান্সে এক মুহূর্তের জন্যও বাংলাদেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি। আগামি সিরিজগুলোর আগে দলকে নতুন করে সাজানো, টেকনিক্যাল দিকগুলোতে উন্নতি আনা এবং মানসিক দৃঢ়তা গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।

কলম্বোর টেস্ট ছিল বাংলাদেশের জন্য শুধুই একটি ম্যাচ নয়, বরং সেটি ছিল একটি সতর্কবার্তা—এই দল টেস্টে কতটা পিছিয়ে পড়ছে এবং কীভাবে তা কাটিয়ে ওঠা প্রয়োজন। ব্যাটিং ব্যর্থতা, প্রস্তুতির ঘাটতি এবং পরিকল্পনার দুর্বলতায় আবারও হারলো বাংলাদেশ—এবার ইনিংস ব্যবধানে।

No comments found