close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

ঈমানের গল্প: লিবিয়ান যুবক আমেরের অলৌকিক হজযাত্রা

আসগর সালেহী avatar   
আসগর সালেহী
আসগর সালেহী

লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের এক অজপাড়াগাঁ থেকে উঠে আসা এক যুবক — আমের আল মানসুর আল গাদ্দাফি। ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল একদিন পবিত্র হজ পালন করবেন। বছর ঘুরে অবশেষে সেই কাঙ্ক্ষিত সুযোগ এসে যায়। ২০২৫ সালের হজের জন্য নাম ওঠে তার। বুকভরা আনন্দ, চোখভরা স্বপ্ন, আর অন্তরে আল্লাহর প্রতি গভীর আস্থায় মক্কার পথে রওনা হন আমের।

বিমানবন্দরে প্রথম ধাক্কা

সুবহা বিমানবন্দরে পৌঁছেই তার স্বপ্নের পথে প্রথম বাধা। ইমিগ্রেশন চেকের সময় জানা গেল — তার নামের শেষাংশ “আল গাদ্দাফি” হওয়ায় নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যা। লিবিয়ার সাবেক শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির নামের সঙ্গে মিল থাকায় এখনো অনেক সিস্টেমে সেই নাম নিষিদ্ধ তালিকায়।

ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ আপ্রাণ চেষ্টা চালালেও সময় তখন আর হাতে নেই। বিমানের সময় হয়ে গেছে। অবশেষে, বিমানের তালিকা থেকে তার নাম কেটে দেওয়া হলো। সবার সামনে বিমানে ওঠার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা আমের দেখলেন, তার চোখের সামনে দিয়ে হজযাত্রীদের শেষ ফ্লাইটটি উড়ে গেল।

ঈমানের দৃঢ়তা

যেখানে কেউ হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যেত, সেখানে আমের বুক টান করে দাঁড়িয়ে বললেন,

> “না! আমি জানি — আল্লাহ চাইলে, এই বিমানেই আমি হজে যাব। আমি এখানেই থাকব।”

 

চারপাশের লোকেরা বুঝিয়ে-শুনিয়ে হাল ছেড়ে দিল। আমের নড়লেন না। অনড় ভরসা, দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে বিমানবন্দরে বসে রইলেন।

অলৌকিক মোড়

অবিশ্বাস্যভাবে, কিছুক্ষণ পর সংবাদ এলো — বিমানটির এয়ারকন্ডিশনে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে। বিমানটি ফিরছে।

লোকজন বলল —
“দেখলে! কিন্তু এখন আর তুই উঠতে পারবি না। কারণ বিমানের ইঞ্জিন চালু রেখেই সমস্যা সারছে।”

ঠিক তাই হলো। দ্বিতীয়বারের মতো আবারও তাকে উঠতে দেওয়া হলো না। বিমানের পাইলট নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকির কথা জানিয়ে ফের উড়িয়ে নিলেন ফ্লাইটটি।

দ্বিতীয় ধাক্কা, তবু ভাঙেনি মনোবল

এমন সময় যে কারো মন ভেঙে যেত। কিন্তু আমের তখনও বলেন,

> “না। আমার এবছরই হজ হবে। আমি এখানেই থাকব।”

 

কারও কোনো কথা তাকে ফেরাতে পারলো না। সবাই অবাক হয়ে দেখলো, একজন যুবক — যার মুখে বড় দাড়ি নেই, মাথায় পাগড়িও নয়, অথচ অন্তরে পরিপূর্ণ ঈমান আর আস্থায় অনড়।

অলৌকিক যুবক আমের (ছবি সংগৃহীত)

শেষ মুহূর্তের অলৌকিকতা

আরও কিছুক্ষণ পর আবার খবর এলো — বিমানটিতে নতুন আরেকটি ছোটখাটো যান্ত্রিক ত্রুটি। আবারও ফ্লাইটটি ফিরতে বাধ্য হলো। এবার পাইলট নিজেই বললেন,

> “আল্লাহর কসম! এই ছেলেটিকে বিমানে না নিলে আমি আর ফ্লাইট চালাবো না।”

 

বিমানের সবাই তাকিয়ে রইলো। মুহূর্তটা যেন কোনো সিনেমার চেয়েও বেশি নাটকীয়। অবশেষে সেই যুবক আমের বিমানে উঠলেন। যাত্রীরা আনন্দে উল্লাস করল, ভিডিও করলো।

অবশেষে পূর্ণ হলো স্বপ্ন

অল্প সময়ের মধ্যে সৌদি আরব পৌঁছে, হজের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আমের একটি ভিডিও বার্তায় জানালেন,

> “এ যেন এক কল্পনার চেয়েও বেশি অবিশ্বাস্য ঘটনা। যখন কারো ইচ্ছা সৎ হয়, আর ঈমান দৃঢ় থাকে — তখন দুনিয়ার কোনো কিছুই আল্লাহর সিদ্ধান্তকে ঠেকাতে পারে না।”

শেষ কথা:

এই গল্প আমাদের শেখায় — ঈমান শুধু মুখে নয়, অন্তরে থাকতে হয়। চেহারা দিয়ে নয়, নির্ভর করে অন্তরের ভরসা আর আল্লাহর প্রতি গভীর আস্থার ওপর। আর যখন আল্লাহ কোনো নিয়তি নির্ধারণ করে দেন, তখন দুনিয়ার কোনো পাসপোর্ট জটিলতা, নিরাপত্তা প্রটোকল, কিংবা বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটি তাতে বাধা হতে পারে না।

যেখানে অবিশ্বাসীরা ভাবে, “এটা কাকতালীয়”, মুমিনের হৃদয় বলে —
“এটাই আল্লাহর কুদরত।”

No comments found


News Card Generator