close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

ই স রা য়ে লে র কতগুলো পা র মা ণ বি ক বো মা রয়েছে,

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইসরায়েলের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে অস্পষ্টতা বজায় রাখা ‘আমিমুত’ নীতি, যা মধ্যপ্রাচ্যে শক্তি সমীকরণকে জটিল করে তুলেছে এবং শতাধিক পারমাণবিক বোমার গোপন তথ্য উদ্ঘাটন কঠিন করে দিয়েছে।..

গত শতকের ষাটের দশক থেকে ইসরায়েলের নিজস্ব পারমাণবিক অস্ত্রধারণের তথ্য গোপনই রেখেছে দেশটি। যদিও আজ পর্যন্ত ইসরায়েল কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের অস্তিত্ব স্বীকার করেনি, তবুও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ ব্যাপারে নিশ্চিত। ইসরায়েলকে মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র পারমাণবিক ক্ষমতা হিসেবে গণ্য করা হয়, যা তার কূটনৈতিক ও সামরিক নীতিতে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।

ইসরায়েলের পারমাণবিক অস্ত্রের বিষয়ে একেবারে স্পষ্টতা না দেখিয়ে ‘আমিমুত’ বা ইচ্ছাকৃত অস্পষ্টতার নীতি পালন করে আসছে দেশটি। এই নীতির মাধ্যমে তারা পারমাণবিক অস্ত্র থাকার বিষয়টি কখনো স্বীকার করেননি, আবার অস্বীকারও করেননি। ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিমন পেরেজ তার আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন, “অস্পষ্টতা একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা,” যা দ্বিতীয়বার হলোকস্টের মতো কোনো ধ্বংসাত্মক ঘটনা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই অস্পষ্টতা নীতির মাধ্যমেই ইসরায়েল নিজেকে অস্তিত্বগত হুমকির বিরুদ্ধে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। তবে এটি মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধে সবচেয়ে বড় বাধাও হয়ে দাঁড়িয়েছে।

১৯৮৬ সালে সাবেক পারমাণবিক প্রকৌশলী মোর্দেচাই ভানুনু জানিয়েছিলেন, ইসরায়েলের কাছে তখন প্রায় ১০০ থেকে ২০০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড ছিল। বর্তমানের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ধারণা অনুযায়ী, ইসরায়েলের কাছে আনুমানিক ৯০টির মতো পারমাণবিক বোমা থাকতে পারে।

এই বোমাগুলো তৈরির জন্য প্লুটোনিয়াম উৎপাদিত হয় ডিমোনার নেগেভ পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রে। যদিও ইসরায়েল দাবি করে, ওই চুল্লির উৎপাদনক্ষমতা ২৬ মেগাওয়াট, অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন এটি আরও বেশি। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) ইসরায়েলের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পর্যবেক্ষণের অনুমতি পান না, তাই প্রকৃত তথ্য জানা খুব কঠিন।

ইসরায়েল পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) সই করেনি। ফলে তারা আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শনের বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ইরানসহ অন্যান্য দেশ এই চুক্তির আওতায় পড়ে। এই পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিয়ে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি করেছে।

গতকালের মতো আজও ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা ও সামরিক সংঘাত ক্রমবর্ধমান। ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি পৌঁছেছে বলে দাবি করলেও, ইসরায়েল ইরানের ওপর হামলা অব্যাহত রেখেছে। পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও চলছে। এই পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যের পুরো অঞ্চলে অস্থিরতা বাড়াচ্ছে এবং পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার বা হুমকির আশঙ্কা বাড়াচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইসরায়েলের ‘আমিমুত’ নীতির কারণেই তারা পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে স্পষ্ট তথ্য দেয় না। তবে শান্তি ও নিরাপত্তা গবেষক জেভিয়ার বোহিগাস বলেন, “ইসরায়েল সামরিক শক্তিতে অস্পষ্টতা বজায় রেখে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করে আসছে।” এ কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে তাদের ওপর সঠিক নজরদারি করতে পারে না।

অধ্যাপক অ্যাভনার কোহেনের মতে, এই অস্পষ্টতা নীতিই ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় কৌশলগত সাফল্য, যা তাদের অস্তিত্ব রক্ষায় সাহায্য করেছে। তবুও পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের বিনিময়ে কোনো রাজনৈতিক বা নৈতিক মূল্য দিতে হয়নি।

মধ্যপ্রাচ্যের পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধে ইসরায়েলের অস্পষ্টতার নীতি বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে বলে আন্তর্জাতিক সংস্থা সেন্টার ফর আর্মস কন্ট্রোল অ্যান্ড নন-প্রলিফারেশন মত প্রকাশ করেছে। এর ফলে পুরো অঞ্চলে অস্ত্র প্রতিযোগিতা তীব্র হতে পারে, যা বিশ্ব শান্তির জন্য বিপদজনক।

তবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কোনো পরিবর্তনের আশা করা কঠিন, কারণ এটি তাদের নিরাপত্তার অন্যতম স্তম্ভ। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে নতুন কৌশল নিয়ে কাজ করতে হবে।

Nema komentara