close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

ই রা নি নির্মাতা জাফর পানাহির দেশে ফেরার আকুতি

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
অস্ট্রেলিয়ায় আটকে পড়েছেন ইরানি নির্মাতা জাফর পানাহি। যুদ্ধের কারণে দেশে ফেরা বন্ধ। ইনস্টাগ্রামে দিলেন মর্মস্পর্শী বার্তা—মায়ের কাছে যেতে না পারার যন্ত্রণায় কাতর কিংবদন্তি এই পরিচালক।..

ইরানের বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ও কান চলচ্চিত্র উৎসবে স্বর্ণপামজয়ী জাফর পানাহি বর্তমানে অবস্থান করছেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। সিডনি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে অংশ নিতে গিয়ে তিনি এখন বাস্তবিক অর্থেই ‘নির্বাসিত’। কারণ, ইরানে চলমান যুদ্ধের কারণে আকাশপথ ও স্থলপথ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। আর সেই কারণেই তিনি নিজ দেশে ফিরতে পারছেন না। এই অচলাবস্থার মাঝেই এক আবেগঘন ইনস্টাগ্রাম পোস্টে নিজের মনোকষ্টের কথা প্রকাশ করেন এই কিংবদন্তি নির্মাতা।

ইনস্টাগ্রামে দেওয়া চার দিন আগের এক পোস্টে পানাহি লিখেছেন,প্রতিদিন চেষ্টা করি দেশে ফিরতে। মায়ের কাছে যেতে মন চায়। কিন্তু সব পথ যেন রুদ্ধ। আমি অসহায় বোধ করি যখন দেখি আমার স্বজনরা, আমার দেশের মানুষ প্রতিদিন যুদ্ধের শিকার হচ্ছে।

এই মর্মস্পর্শী বার্তায় ফুটে উঠেছে তার অসহায়ত্ব, তার ভেতরের যুদ্ধ। তিনি জানান, যুদ্ধ শুরুর আগমুহূর্তেই তিনি সিডনির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু ক’দিন পরেই পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়, সীমান্তে চলাচল নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এরপর থেকেই তিনি আর দেশে ফিরতে পারছেন না।

জাফর পানাহি শুধুমাত্র একজন নির্মাতা নন—তিনি এক প্রতিবাদী কণ্ঠ। বরাবরই নিজের চলচ্চিত্রে তুলে ধরেছেন ইরানি সমাজে চলমান নিপীড়ন, রাজনৈতিক সংকট, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের বাস্তব চিত্র।

তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে:

  • ট্যাক্সি তেহরান (Taxi Tehran) – যেখানে তেহরানের রাস্তায় চালকের আসনে বসেই তিনি সমাজের নানা স্তরের মানুষের বাস্তবতা তুলে ধরেন।

  • নো বিয়ারস (No Bears) – যেখানে তিনি নিজেই ছিলেন চরিত্র, দেখিয়েছেন বাস্তব ও কল্পনার মিশ্রতা এবং সমাজের অস্থিরতা।

  • দিস ইজ নট আ ফিল্ম (This Is Not a Film) – ঘরবন্দি অবস্থায় নিজের বঞ্চনা ও রাষ্ট্রীয় হুমকির চিত্র তুলে ধরেছিলেন এই সিনেমায়।

এই ধরনের সাহসী নির্মাণের কারণে তিনি বহুবার রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়েছেন। তাকে করা হয়েছে গৃহবন্দি, গ্রেফতার করা হয়েছে, চলচ্চিত্র নির্মাণে দেওয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। তবুও তিনি থেমে থাকেননি।

তার ইনস্টাগ্রাম বার্তায় আরও উঠে এসেছে যুদ্ধবিরোধী মানবতাবাদী মনোভাব। তিনি লিখেছেন:যখন একটি জাতির ভবিষ্যৎ কিছু ক্ষমতালোভী ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী মানুষের হাতে বন্দি হয়ে পড়ে, তখন আমাদের হাতে থাকে কেবল ক্ষোভ, বেদনা আর ভবিষৎ প্রজন্মের কাছে সত্য বলার দায়।

এই বক্তব্য শুধু ইরানের জন্যই নয়—সমগ্র পৃথিবীর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর চিত্র তুলে ধরে। একজন শিল্পীর পক্ষে দেশ, মাতৃভূমি, মা—এই তিনটির মধ্যে যেকোনো একটিকে বেছে নেওয়া নয়, বরং সব কিছুর মাঝে সেতুবন্ধন তৈরি করা।

বর্তমানে সিডনিতে তিনি অবস্থান করলেও তার ফিরে আসার কোনো সুনির্দিষ্ট তারিখ বা পরিকল্পনা নেই। যুদ্ধ পরিস্থিতি কখন স্বাভাবিক হবে, আকাশপথ ও স্থলপথ কবে খুলবে, তাও জানা নেই। এমন পরিস্থিতিতে তিনি কেবল অপেক্ষা করছেন—একটা দিন যখন তিনি মায়ের কোলে ফিরতে পারবেন, নিজের শহরে হাঁটতে পারবেন, আর কোনো ক্যামেরার পেছনে দাঁড়িয়ে বলতে পারবেন—‘এই চলচ্চিত্রটা আমি আমার দেশের জন্য বানিয়েছি।’

জাফর পানাহির মতো একজন পরিচালক যখন নিজের দেশে ফিরতে না পেরে চোখের জল ফেলেন, তখন তা শুধুই একজন মানুষের কষ্ট নয়—তা একটি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক বাস্তবতার অন্ধকার দিক। যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়, শিল্প ও ভালোবাসাই পারে পৃথিবীকে রক্ষা করতে।

Nenhum comentário encontrado