রুশ বিশেষজ্ঞরা ইরানে, পারমাণবিক কেন্দ্রে ইসরাইলি হামলার আশঙ্কায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দিল মস্কো
রাশিয়া ইসরাইলকে কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, অবিলম্বে ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামোর ওপর সামরিক হামলা বন্ধ করতে হবে। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সেন্ট পিটার্সবার্গ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামের এক ব্রিফিংয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা একথা বলেন।
তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ইসরাইলি হামলা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য। এটি শুধু আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল নয়, বরং গোটা বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি।
রাশিয়ার এই বিবৃতির গুরুত্ব আরও বেড়ে যায় কারণ ইরানের বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বর্তমানে রাশিয়ার বহু প্রযুক্তিবিদ ও পরমাণু বিশেষজ্ঞ কর্মরত আছেন। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রেই ইসরাইল কোনো ধরনের সামরিক হামলা চালালে তা সরাসরি রাশিয়ান নাগরিকদের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। এমন পরিস্থিতিকে 'পারমাণবিক বিপর্যয় ডেকে আনা'র মতো সিদ্ধান্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন জাখারোভা।
তিনি বলেন, “এই ধরনের পদক্ষেপ শুধু ইরান বা ইসরাইলকেই নয়, গোটা বিশ্বকে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলতে পারে। পারমাণবিক নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা রক্ষায় এই আচরণ সম্পূর্ণভাবে বিপজ্জনক।
রাশিয়া এই ইস্যুতে কেবল ইসরাইলকেই নয়, যুক্তরাষ্ট্রকেও স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। জাখারোভা বলেন, “আমরা ওয়াশিংটনকে সতর্ক করে দিতে চাই যে, এই অঞ্চলে যেকোনো সামরিক হস্তক্ষেপ অভাবনীয় নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। এটি মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা পুরোপুরি ভেঙে ফেলতে পারে।
তিনি ইসরাইলি হামলাকে ‘বিনা উসকানিতে আগ্রাসন’ বলে অভিহিত করে বলেন, “এটা কোনো আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা নয়। বরং এটি পরিকল্পিত ও বিপজ্জনক হামলা, যার আন্তর্জাতিক পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে।
বিশ্বে পারমাণবিক নিরাপত্তা নিয়ে আগেও অনেকবার উদ্বেগ দেখা গেছে। কিন্তু এবার বিষয়টি আরও স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে কারণ সরাসরি দুটি পরাশক্তি — রাশিয়া ও ইসরাইল — এই ইস্যুর কেন্দ্রবিন্দুতে এসে দাঁড়িয়েছে। বুশেহর বিদ্যুৎ কেন্দ্র রাশিয়ার কারিগরি সহায়তায় তৈরি এবং পরিচালিত। রাশিয়া এখানে শুধু প্রযুক্তি সরবরাহ করছে না, বরং মানবসম্পদও নিয়োজিত করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি ইসরাইল এই পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণ চালায়, তাহলে শুধু ইরান নয়, গোটা অঞ্চল এবং রাশিয়ান অংশগ্রহণকারী কর্মীরাও চরম বিপদের মধ্যে পড়বে। সেই সঙ্গে রাশিয়ার সঙ্গে ইসরাইল বা পশ্চিমাদের সম্পর্ক আরও তিক্ত হতে পারে।
এদিকে ইরানও তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিকে পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ দাবি করে আসছে। তারা বলছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্যই এসব কেন্দ্র ব্যবহৃত হচ্ছে। এর বিপরীতে ইসরাইল দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে যে ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে।
এই বিবৃতি রাশিয়া–ইসরাইল সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক নতুন টানাপড়েনের সূচনা করতে পারে। আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের মতে, এটি শুধু একটি সাধারণ বিবৃতি নয়, বরং আন্তর্জাতিক পরিসরে একটি কঠিন বার্তা — বিশেষ করে যখন মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের ছায়া ঘনিয়ে আসছে।
রাশিয়ার এই হুঁশিয়ারির পর, এখন দৃষ্টি থাকবে ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে। পরিস্থিতি শান্ত থাকবে, না কি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠবে — সেটাই এখন বিশ্ব কূটনীতির বড় প্রশ্ন।