যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়, তবে তা গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে এক ভয়ঙ্কর ও দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে জড়াতে পারে—এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি সংক্রান্ত সাবেক উপদেষ্টা ডেভিড ফিলিপস। তিন প্রশাসনে (ক্লিনটন, বুশ ও ওবামা) দায়িত্ব পালন করা ফিলিপস বর্তমানে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি গবেষক হিসেবে কর্মরত।
আলজাজিরাকে দেওয়া এক বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সময় বেঁধে দিয়ে কূটনৈতিক সমাধান চেয়েছিলেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই ইরানে হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। আর এতে করে ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত প্রায় ৪০ হাজার মার্কিন সেনা।
ফিলিপস সরাসরি বলেন, “পারস্য জাতির সম্মানকে হালকাভাবে নেওয়া খুব বড় ভুল। ইরান এখন ইসরায়েল নয়, সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত। প্রতিশোধের আগুন নিশ্চয়ই ধীরে ধীরে দাউ দাউ করে জ্বলবে।”
তার মতে, ইরানের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া হতে পারে—
-
যুক্তরাষ্ট্রের সেনাঘাঁটিগুলোতে লক্ষ্যভিত্তিক আক্রমণ
-
লোহিত সাগরসহ গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অঞ্চলগুলোতে হামলা
-
মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে মার্কিন স্বার্থে মারাত্মক প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ
ফিলিপস বলেন, এই সংঘাত একবারেই থেমে যাবে, এমন আশা করছি না। এটি কেবল শুরু। যুক্তরাষ্ট্র একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে এমন দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে, যা আগামী এক দশকজুড়ে টান টান উত্তেজনা বজায় রাখতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা যদি সরাসরি যুদ্ধের রূপ নেয়, তবে তেলের বাজার থেকে শুরু করে বিশ্ব রাজনীতিতে এক ভয়াবহ অস্থিরতা নেমে আসবে। যুক্তরাষ্ট্রের আকস্মিক এবং ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপগুলো বিশ্বশক্তির ভারসাম্যে বড় রকমের প্রভাব ফেলতে পারে।
একজন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক বলেন, এটা শুধু যুক্তরাষ্ট্র বনাম ইরান নয়—এটা গোটা বিশ্বব্যবস্থার একটা টেস্ট কেস। কূটনীতি ব্যর্থ হলে পারমাণবিক যুদ্ধের ছায়া বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে।
বর্তমানে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, যদি দ্রুত কূটনৈতিক উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তবে ইরান প্রতিশোধ নিতে বাধ্য হবে। এবং তখন যুদ্ধ থামানো আর সহজ হবে না।
ইরান ইতিমধ্যেই আভাস দিয়েছে, তারা হামলার জবাব দিতে প্রস্তুত। প্রশ্ন হচ্ছে—যুক্তরাষ্ট্র কি আরেকটি ‘ইরাক যুদ্ধ’-এর পথে হাঁটছে?
মধ্যপ্রাচ্য এখন এক উত্তপ্ত বারুদের স্তূপে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানে হামলা চালায়, তবে তা শুধু দুই দেশের নয়, বরং গোটা বিশ্বের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয়ের ইঙ্গিত হতে পারে।