মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার আগুন যেন আরও তীব্র হয়ে উঠেছে।
শনিবার, ২১ জুন—ইরানের খোরামাবাদ শহরে হঠাৎ করে ভয়ঙ্কর বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান।
এই ঝটিকা হামলায় নিহত হয়েছেন ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (IRGC)-এর পাঁচ সদস্য।
তবে এই পাঁচজনের মধ্যে রয়েছেন ইরানের অন্যতম কৌশলগত শীর্ষ কর্মকর্তা, যারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ড্রোন হামলার তত্ত্বাবধান করতেন।
রয়টার্স ও ইরানি সরকারি মিডিয়ার বরাতে জানা গেছে, ইসরায়েলের এই সামরিক অভিযান ছিল পরিকল্পিত ও টার্গেটেড।
এতে IRGC-এর ইউএভি (ড্রোন) ইউনিটের দ্বিতীয় প্রধান, যিনি সম্প্রতি নিহত প্রধান কমান্ডারের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন, তাকেও হত্যা করা হয়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী প্রকাশ্যে জানায়, আমিন পুর জোদখি নামের এই কমান্ডার ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে ইসরায়েল লক্ষ্য করে শত শত ড্রোন উৎক্ষেপণের দায়িত্বে ছিলেন।
সেই কারণেই তাকে “স্ট্র্যাটেজিক থ্রেট” হিসেবে চিহ্নিত করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী।
পূর্ব-পরিকল্পিত হামলায় তার ওপর মিসাইল নিক্ষেপ করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।
খোরামাবাদ শহরের আকাশে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে কাঁপন ধরানো গর্জন।
ইসরায়েলি হামলায় শহরের বহু স্থাপনা ধ্বংস হয়। স্থানীয়রা বলছেন, বেসামরিক এলাকাও রেহাই পায়নি।
হামলার পর মুহূর্তেই শহরে নামিয়ে আনা হয় বিপ্লবী গার্ডদের এলিট ইউনিট।
তবে পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
এই হামলা একই দিনে সীমাবদ্ধ ছিল না। ইসরায়েল কাটজ—ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী—ঘোষণা করেছেন,
ইরানের কোম শহরে কুদস ফোর্সের ফিলিস্তিনি শাখার কমান্ডার সাইদ ইজাদিকেও হত্যা করা হয়েছে।
তিনি তার অ্যাপার্টমেন্টে অবস্থান করছিলেন, ঠিক তখনই চালানো হয় অত্যন্ত নিখুঁত ও স্মার্ট ক্ষেপণাস্ত্র হামলা।
ইজাদির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি হামাসকে আর্থিক সহায়তা ও অস্ত্র সরবরাহ করতেন।
ইসরায়েল এই হত্যাকে ‘৭ অক্টোবরের গণহত্যার প্রতিশোধ’ হিসেবে দাবি করেছে।
কাটজ বলেন, “ইজাদির মৃত্যু ইসরায়েলি গোয়েন্দা এবং বিমানবাহিনীর বিশাল অর্জন। আমাদের দীর্ঘ হাত সব শত্রুর ঘাড়ে পৌঁছাবে।”
এদিকে, ইরানের পক্ষে এখনো কোনো বড় প্রতিক্রিয়া আসেনি, তবে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থাগুলো ‘দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী’কে এর পরিণতি ভোগ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা আরেক দফা বাড়বে।
বিশেষ করে, ইরানের ড্রোন এবং পরমাণু সক্ষমতার উপর এই হামলা সরাসরি সামরিক যুদ্ধের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বিশ্লেষক ড. রেজা ফারহাদ বলেন,ইসরায়েল কৌশলগতভাবে ইরানের আভ্যন্তরীণ সামরিক গঠনতন্ত্রকে দুর্বল করছে। তবে এর প্রতিশোধ নেওয়া ইরানের জন্য সময়ের ব্যাপার মাত্র।
জাতিসংঘ ইতোমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এই ঘটনার পর।
মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটিগুলোতেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
গভীর উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে লেবানন, সিরিয়া ও ইয়েমেনে ইরান-ঘনিষ্ঠ মিলিশিয়াদের মধ্যে।
এই সর্বাত্মক ও সমন্বিত হামলা ইসরায়েলের এক ভয়ংকর বার্তা—
"আমরা জানি, কোথায়, কখন, কীভাবে ঘায়েল করতে হয়!"
তবে সেই সঙ্গে এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ আর কূটনৈতিক টানাপোড়েনের শেষ কোথাও নেই।
আগামী ঘন্টাগুলো হতে পারে আরও রক্তাক্ত, আরও বিস্ফোরক।



















