মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজায় চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন এবং ইসরায়েলকে অবিলম্বে বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে বলেছেন। হামাস সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি পরিকল্পনায় আংশিক সম্মতি দেওয়ার পর ট্রাম্প এই আহ্বান জানান। তিনি বিশ্বাস করেন, এই পদক্ষেপ স্থায়ী শান্তি ও জিম্মিদের নিরাপদ মুক্তির পথ খুলে দিতে পারে।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, “হামাসের সদ্য প্রকাশিত বিবৃতির ভিত্তিতে আমি বিশ্বাস করি তারা স্থায়ী শান্তির জন্য প্রস্তুত। ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে হবে, যাতে আমরা জিম্মিদের নিরাপদে এবং দ্রুত মুক্ত করতে পারি।” তিনি আরও সতর্ক করেন যে, চলমান হামলার মধ্যে জিম্মিদের মুক্ত করা অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং শান্তি আলোচনার সুযোগ নষ্ট করতে পারে।
এর আগে ট্রাম্প হামাসকে রোববার রাতের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর আলটিমেটাম দিয়েছিলেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, যদি হামাস প্রস্তাব না মেনে নেয়, তাহলে গাজায় নরক নেমে আসবে। এই হুঁশিয়ারির পর হামাস জানায়, যুদ্ধ বন্ধ হলে তারা সব ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিতে প্রস্তুত এবং ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি।
হামাসের এই ঘোষণা গাজা সংঘাতের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। তারা জানিয়েছে, যদি যুদ্ধ বন্ধ হয়, তবে তারা কেবল জিম্মিদের মুক্তি নয়, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনায় অংশ নেবে। এদিকে, ট্রাম্প শান্তি আলোচনায় সহায়তার জন্য কাতার, তুরস্ক, সৌদি আরব, জর্ডান ও মিশরসহ কয়েকটি রাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং তাদের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন।
এর আগে সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প ২০ দফা শান্তি প্রস্তাব ঘোষণা করেন। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, হামাস যদি যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়, তাহলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত ও মৃত সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে। এর পরেই গাজায় একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় ‘দ্য বোর্ড অব পিস’ নামে একটি অন্তর্বর্তী শান্তি প্রশাসন গঠন করা হবে।
এই শান্তি প্রশাসন গাজার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনের কাজ পরিচালনা করবে। এতে কাতার, তুরস্ক, মিশর ও সৌদি আরবসহ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শক্তিগুলোর ভূমিকা থাকবে। হামাসকে গাজার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি ছেড়ে দিতে হবে এবং অস্ত্রবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর ওই প্রশাসন স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাব ও হামাসের আংশিক সম্মতি গাজা সংঘাতের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে। এখন আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি ইসরায়েল সরকারের দিকে, তারা কি এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বোমাবর্ষণ বন্ধ করবে, নাকি সংঘাত আরও জটিল আকার নেবে।



















