মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত রাজনীতির মঞ্চে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যকার সংঘাত ভয়াবহ নতুন মোড় নিয়েছে। ইসরাইলের সাম্প্রতিক বিমান হামলার জবাবে শনিবার ভোরে ইরান চালায় পাল্টা রকেট হামলা। হামলার মূল লক্ষ্য ছিল তেল আবিবের দক্ষিণাঞ্চলের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা রিশোন লেজিয়োন।
এই হামলায় এখন পর্যন্ত ৩ জন নিহত এবং ৮০ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের জরুরি সেবা কর্তৃপক্ষ। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক, আর বহু মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জরুরি সেবা বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থল পরিণত হয়েছে এক মৃত্যু উপত্যকায়। একাধিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ভেঙে পড়েছে ছাদ, মেঝে। স্থানীয় সময় সকাল থেকে চলছে উদ্ধার অভিযান। কাজ করছে বিপুল সংখ্যক প্যারামেডিক, দমকল বাহিনী এবং সেনাবাহিনী।
জরুরি সেবা বিভাগের আয়ালন অঞ্চলের উপ-পরিচালক রামি মুশার বলেন,
"ঘটনাটি অত্যন্ত ভয়াবহ। আমরা এখনও নিশ্চিত না, ভবনের ভেতর আরও কেউ আটকে আছেন কি না। আমাদের টিম ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে জীবিতদের খুঁজে বের করার জন্য নিরলস চেষ্টা চালাচ্ছে।"
এই পাল্টা হামলার সূত্রপাত শুক্রবার ভোরে, যখন ইসরাইল ইরানের বিভিন্ন পরমাণু এবং সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে বড় পরিসরের বিমান হামলা চালায়। দাবি করা হয়, এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল ইরানের ‘অবৈধ সামরিক কর্মকাণ্ড’ বন্ধ করা। কিন্তু ইরান এটিকে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলে আখ্যা দেয়।
ইসরাইলি হামলায় ইরানের অন্তত ৭টি সামরিক স্থাপনায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করে তেহরান। এরপরই ইরান শুরু করে পাল্টা প্রতিশোধের প্রস্তুতি, যার ফলশ্রুতিতে শনিবার ভোরে চালানো হয় এই ভয়াবহ রকেট হামলা।
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি এক বিবৃতিতে বলেন —
“ইসরাইল আমাদের ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে নিজেদের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকেছে। তারা চরম শাস্তির মুখোমুখি হবে।”
খামেনির এই বক্তব্যের পরই গোটা ইসরাইলজুড়ে উচ্চমাত্রার সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রাজধানী জেরুজালেম, হাইফা এবং তেল আবিবে সক্রিয় রয়েছে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ইরান-ইসরাইল সংঘাত যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে এটি পুরো মধ্যপ্রাচ্যে আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারে। লেবাননের হিজবুল্লাহ, গাজা উপত্যকার হামাসসহ একাধিক গোষ্ঠী এই সংঘাতে সরাসরি জড়িয়ে পড়তে পারে। তাতে সিরিয়া, ইরাক, সৌদি আরব, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিও বিপদের মুখে পড়বে।
এই হামলার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এখন এই অঞ্চলের দিকে। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তবে এখনো কোনো পক্ষ শান্তিপূর্ণ সমাধানের উদ্যোগ নেয়নি।