close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

হরমুজ প্রণালী কি খামিনির ট্রাম্প কার্ড?

G R MURSALIN avatar   
G R MURSALIN
পারস্য উপসাগরের সংকীর্ণ প্রবেশদ্বার, হরমুজ প্রণালী, আবারও বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামিনির হাতে থাকা এই কৌশলগত জলপথ কি সত্যিই তার ‘ট্রাম্প কার্ড’? নাকি এটি ..

খামিনির ট্রাম্কেপ কার্ড কেনো?

তেহরানের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, হরমুজ প্রণালীর ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ এক বিরাট কৌশলগত সুবিধা। এই প্রণালীর ভৌগোলিক অবস্থান এমন যে, ইরান খুব সহজেই এর নৌচলাচল বিঘ্নিত করতে পারে। মাইন স্থাপন, দ্রুতগামী বোটের মাধ্যমে আক্রমণ, উপকূল থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ অথবা ড্রোন হামলা চালানোর সক্ষমতা ইরানের রয়েছে।

যদি ইরান এই প্রণালী বন্ধ করে দেয়, তবে বিশ্ববাজারে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে অনেক বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা করছেন। এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের ওপর প্রচণ্ড অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি হবে। বিশেষ করে চীন ও ভারতের মতো দেশগুলো, যারা হরমুজের তেলের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল, তারাও ইরানের ওপর থেকে চাপ কমানোর জন্য ওয়াশিংটনকে অনুরোধ করতে বাধ্য হতে পারে। ন্যাশনাল ইরানিয়ান আমেরিকান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট জামাল আবদির ভাষায়, "এটি ইরানের জন্য প্রতিরোধের একটি প্রধান উপায় হতে পারে।" এই কৌশলগত চালের মাধ্যমে ইরান আঞ্চলিক সংঘাতের গতিপথ নিজেদের অনুকূলে আনার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করতে পারে।

**আত্মঘাতী পদক্ষেপের ঝুঁকি**

কিন্তু মুদ্রার অপর পিঠও রয়েছে। হরমুজ প্রণালী বন্ধ করা ইরানের জন্য একটি দ্বিমুখী তলোয়ারের সামিল। প্রথমত, এই পদক্ষেপ নিশ্চিতভাবে একটি সামরিক সংঘাতকে উস্কে দেবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম নৌবহর বাহরাইনে মোতায়েন রয়েছে এবং ওয়াশিংটন বারবার জানিয়েছে যে, তারা এই জলপথে নৌচলাচলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। হরমুজ বন্ধের যেকোনো প্রচেষ্টা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের প্রত্যক্ষ সামরিক হস্তক্ষেপ ডেকে আনবে, যার পরিণতি ইরানের জন্য ভয়াবহ হতে পারে।

দ্বিতীয়ত, অর্থনৈতিকভাবে ইরান নিজেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইরান তার নিজের তেল রপ্তানির জন্য এই প্রণালীর ওপর নির্ভরশীল। প্রণালী বন্ধ হলে ইরানের অর্থনীতি, যা ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার ভারে ন্যুব্জ, তা পুরোপুরি ভেঙে পড়তে পারে।

তৃতীয়ত, এই পদক্ষেপ ইরানকে আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে করে ফেলবে। চীন, ইরানের তেলের বৃহত্তম ক্রেতা এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তার গুরুত্বপূর্ণ মিত্র, হরমুজ বন্ধের পদক্ষেপে সমর্থন দেবে না। কারণ এতে চীনের নিজস্ব জ্বালানি নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হবে। রাশিয়াও বিশ্ববাজারে তেলের দামে অস্থিরতা চাইবে না। ফলে, খামিনি তার সবচেয়ে বড় মিত্রদেরও পাশে না পাওয়ার ঝুঁকিতে পড়বেন।

**বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ**

অধিকাংশ বিশ্লেষকের মতে, হরমুজ প্রণালী পুরোপুরি এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া ইরানের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। এটি একটি ‘আত্মঘাতী বিকল্প’। তবে, ইরান সীমিত পরিসরে উত্তেজনা বাড়াতে পারে। যেমন, বাণিজ্যিক জাহাজের গতিপথে বাধা সৃষ্টি করা, মাইন পাতার হুমকি দেওয়া বা সামরিক মহড়া চালানো। এর মাধ্যমে তারা বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করে দর কষাকষির টেবিলে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে চায়।

সুতরাং, হরমুজ প্রণালী খামিনির হাতে একটি শক্তিশালী ‘কার্ড’ হলেও, এটি তার ‘ট্রাম্প কার্ড’ বা তুরুপের তাস নয়। এটি এমন একটি অস্ত্র যা ব্যবহারের আগেই ব্যবহারকারীকে এর বিধ্বংসী পরিণতির কথা ভাবতে হয়। বিশ্ব তাকিয়ে আছে তেহরানের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে। খামিনি কি এই উচ্চ ঝুঁকির খেলাটি খেলবেন, নাকি হরমুজের উত্তাল জলরাশিকে কেবল তার প্রতিপক্ষকে হুঁশিয়ারি দেওয়ার কাজেই ব্যবহার করে যাবেন – তার ওপরই নির্ভর করছে মধ্যপ্রাচ্য তথা বিশ্ব রাজনীতির আগামী দিনের গতিপ্রকৃতি।

没有找到评论