চট্টগ্রামে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে গড়ে ওঠা একটি সম্পর্ক রূপ নিয়েছে ভয়ঙ্কর প্রতারণায়। সম্পর্ক গড়ার নামে কলেজছাত্রীকে ব্যবহার করে তার ছবি সংগ্রহ করে সেগুলো অশ্লীলভাবে সম্পাদনা করে কোটি টাকার ব্ল্যাকমেইলিংয়ের ফাঁদ পেতেছিল এক কলেজ ছাত্র।
কোতোয়ালি থানার পুলিশ জানায়, প্রতারক যুবকের নাম শাফায়েত উল্লাহ, বয়স আনুমানিক ২১, বাড়ি চট্টগ্রাম নগরীর দেওয়ানবাজার এলাকায়। তার বাবা মো. শাহ আলম। শাফায়েত স্থানীয় একটি কলেজের ছাত্র। হোয়াটসঅ্যাপে একটি গ্রুপে পরিচয়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সম্পর্ক। সম্পর্ক গাঢ় হতেই আদান-প্রদান হয় ব্যক্তিগত ছবি।
কৌশলে প্রেম, তারপর অশ্লীল ফাঁদ
দুই মাস আগে নগরীর একাদশ শ্রেণির এক কলেজছাত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয় শাফায়েতের। প্রথমে বন্ধুত্ব, পরে সম্পর্ক গভীর হলে তারা একে অপরকে ছবি পাঠাতে শুরু করে। ছাত্রীটি বিশ্বাস করে পাঠানো ছবি সম্পাদনা করে অশ্লীলভাবে উপস্থাপন করে শাফায়েত। এরপর সেই ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে শুরু হয় ব্ল্যাকমেইল।
প্রথমে দাবি করা হয় ২ লাখ টাকা। কলেজছাত্রী নিরুপায় হয়ে মায়ের ২ ভরি স্বর্ণালংকার শাফায়েতের হাতে তুলে দেয়। কিন্তু এখানেই থেমে থাকেনি প্রতারণা। একে একে কানের দুল, আংটি, নেকলেসসহ মোট ২১ ভরি স্বর্ণালংকার, যার বাজারমূল্য সাড়ে ৩১ লাখ টাকা, তুলে দিতে বাধ্য হয় ছাত্রীটি।
টাকা না পেলেই হুমকি
অভিযোগ রয়েছে, এসব স্বর্ণালংকার নিয়েও ক্ষান্ত হয়নি শাফায়েত। আরও ২ লাখ টাকা দাবি করে। গত ১৫ এপ্রিল নগরীর চেরাগী মোড়ে আরও ৩০ হাজার টাকাসহ মোট ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় সে। অবস্থা সহ্যসীমা ছাড়িয়ে গেলে অবশেষে কোতোয়ালি থানায় কলেজছাত্রী নিজেই অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশের অভিযানে উদ্ধার ৫ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার
ঘটনার গুরুত্ব বুঝে পুলিশ অভিযানে নামে এবং গত ২২ মে চকবাজার এলাকা থেকে শাফায়েতকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে অভিযোগ স্বীকার করে বলে জানান কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুল করিম।
পুলিশ জানায়, তার কাছ থেকে ব্ল্যাকমেইলের কাজে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, ৫ লাখ টাকা, এবং ১৬ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়েছে। পরদিন আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
প্রযুক্তি নির্ভর প্রতারণার সতর্কতা
নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) আলমগীর হোসেন বলেন, "এই ধরণের প্রতারণা রোধে ছবি আদান-প্রদানে সকলকে সতর্ক হতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপরিচিত বা সদ্য পরিচিত কারো প্রতি অতিরিক্ত আস্থা বিপদের কারণ হতে পারে।"
পরামর্শ ও সতর্কতা
-
কখনও ব্যক্তিগত ছবি বা তথ্য কাউকে পাঠাবেন না, বিশেষ করে ভার্চুয়াল সম্পর্কের ক্ষেত্রে।
-
কোনো ব্ল্যাকমেইলের শিকার হলে ভয় না পেয়ে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিন।
-
সাইবার অপরাধ মোকাবেলায় প্রযুক্তি সচেতনতা বাড়ানো সময়ের দাবি।