পবিত্র হজ মুসলিম উম্মাহর জন্য এক মহান ধর্মীয় অনুষ্ঠান, যা আত্মিক পরিশুদ্ধি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের এক উত্তম মাধ্যম। তবে প্রতিবছর এই মহাযাত্রায় অংশ নিতে গিয়ে অনেক বাংলাদেশি নাগরিকের মৃত্যু ঘটে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত সৌদি আরবে হজ পালন করতে গিয়ে ১০ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী মৃত্যুবরণ করেছেন—এ খবর নিঃসন্দেহে আমাদের ব্যথিত ও উদ্বিগ্ন করে।
মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৯ জন পুরুষ ও একজন নারী। মক্কায় মারা গেছেন চারজন এবং মদিনায় ছয়জন। তাঁদের সবাই এক একজন পূণ্যার্থী, যাঁরা জীবনের শেষ অধ্যায়ে পবিত্র ভূমিতে পৌঁছে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। আল্লাহ তাঁদের শাহাদাতের মর্যাদা দান করুন।
তবে এই মৃত্যুর পেছনে কি শুধু নিয়তির ব্যাপার, নাকি আমাদের হজ ব্যবস্থাপনার কোথাও কোনো ঘাটতি আছে—এই প্রশ্নও বিবেচনার দাবি রাখে। অধিকাংশ হজযাত্রীই বয়স্ক। দীর্ঘ যাত্রা, তীব্র গরম, শারীরিক কষ্ট এবং যথাযথ চিকিৎসা সুবিধার অভাব তাঁদের জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়। অতীত অভিজ্ঞতাও বলে, বেশিরভাগ মৃত্যুই ঘটে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা বা প্রচণ্ড গরমে হিটস্ট্রোকের কারণে।
এখানে সরকারের পাশাপাশি হজ এজেন্সিগুলোরও দায়িত্ব রয়েছে। হজে যাওয়ার আগে প্রতিটি হজযাত্রীর স্বাস্থ্যের পূর্ণাঙ্গ চেকআপ, প্রয়োজন অনুযায়ী মেডিকেল ক্লিয়ারেন্স, প্রশিক্ষণ ও মানসিক প্রস্তুতির ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। হজের সময় সৌদি আরবে চিকিৎসা সহায়তা, পর্যাপ্ত গাইড এবং জরুরি সেবা নিশ্চিত না হলে এই মৃত্যুর সংখ্যা ভবিষ্যতেও বাড়তে পারে।
সৌদি আইনের কারণে মৃতদেহ দেশে ফেরত আনা সম্ভব নয়—এ বিষয়টি পরিবারের জন্য মানসিকভাবে অত্যন্ত কষ্টদায়ক। হজে যাওয়ার আগে হজযাত্রী ও তাদের পরিবারকে এই বিষয়টি পরিষ্কারভাবে জানানো জরুরি। প্রয়োজনে সরকারের পক্ষ থেকে কাউন্সেলিং বা সহানুভূতিশীল দিকনির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে।
অতএব, হজযাত্রাকে নিরাপদ, স্বাস্থ্যসম্মত এবং সহানুভূতিশীল করার লক্ষ্যে আমাদের হজ ব্যবস্থাপনায় আরও মানবিকতা, সচেতনতা এবং আধুনিকতা যুক্ত করা এখন সময়ের দাবি। প্রতিটি জীবনই মূল্যবান। পূণ্যলাভের এই মহাসফরে আর কোনো প্রাণ যাতে অপ্রস্তুত অবস্থায় না হারায়, সে লক্ষ্যে এখন থেকেই সকল মহলের একসাথে কাজ করা উচিত।