হেডিংলিতে ইংল্যান্ডের রূপকথা, ভারতের দু:স্বপ্ন

Mehedi Hasan avatar   
Mehedi Hasan
ক্রিকেটকে কেন অনিশ্চয়তার খেলা বলা হয়, তার একেবারে জীবন্ত প্রমাণ হয়ে থাকল হেডিংলি টেস্ট। এমন টেস্ট, যেখানে দুই ইনিংসে পাঁচটি সেঞ্চুরি করেও হার মানতে হয় এক দলকে..

যেখানে পঞ্চম দিনের পিচ, নতুন বল আর মেঘলা আবহাওয়ার পরও বিশাল লক্ষ্য অনায়াসে তাড়া করে ফেলে প্রতিপক্ষ। যেখানে যশপ্রীত বুমরাহর মতো বোলার ২০ ওভার বল করেও উইকেটশূন্য থেকে যান।

হেডিংলিতে ভারতের পরিণতি যেন এক দু:স্বপ্ন, যেটা তারা চাইলেও সহজে ভুলতে পারবে না। ম্যাচের শেষ দিনে ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ৩৭১ রান। স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচ হেলে ছিল ভারতের দিকে। কিন্তু যা ঘটল, সেটা কল্পনারও বাইরে।

দিনের শুরু থেকেই ইংলিশ ওপেনাররা স্পষ্ট করে দেন, তারা শুধু টিকে থাকার জন্য নামেননি—জয়ের জন্যই খেলতে নামা। জ্যাক ক্রলি আর বেন ডাকেট মিলে ভারতীয় বোলারদের শুরু থেকেই চাপে রাখেন। প্রথম উইকেটেই তোলেন ১৮৮ রান। ক্রলি ৬৫ রানে ফিরলেও ডাকেট খেলেন ১৪৯ রানের এক অনবদ্য ইনিংস। এরপর ওলি পোপ ও হ্যারি ব্রুক দ্রুত ফিরে গেলে ভারত সামান্য আশার আলো দেখতে শুরু করে।

কিন্তু সেই আলো নিভিয়ে দেন জো রুট, বেন স্টোকস আর জেমি স্মিথ। তিনজনের কাঁধে ভর করে ইংল্যান্ড পৌঁছে যায় জয়ের গন্তব্যে। পাঁচ উইকেট হাতে রেখেই তুলে নেয় ঐতিহাসিক জয়। সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা।

এই ম্যাচে ব্যাট হাতে ইতিহাস গড়েছিল ভারত। প্রথমবারের মতো একটি টেস্টে পাঁচজন সেঞ্চুরি করেছিলেন। অথচ সেই রেকর্ডই ম্যাচ শেষে হয়ে রইল পরিসংখ্যানের খোরাক মাত্র। কারণ বোলিং বিভাগ কার্যত ব্যর্থ। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ ও শার্দূল ঠাকুর ছিলেন অপ্রতিরোধ্যভাবে খরুচে। বুমরাহ ও সিরাজ ভালো বল করলেও তাঁদের পাশে ছিলেন না ফিল্ডাররা।

ম্যাচের একটি বড় ট্র্যাজেডি ছিল ভারতের ফিল্ডিং। অন্তত আটটি নিশ্চিত ক্যাচ হাতছাড়া হয়েছে পুরো ম্যাচ জুড়ে। শেষ ইনিংসেও ধরা পড়েছে সেই পুরনো রোগ। সুযোগ তৈরি করেও বারবার সেগুলো কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে ভারত।

অধিনায়ক শুভমান গিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতাও প্রশ্নের মুখে। পুরো পঞ্চম দিনে তাঁকে দেখা গেছে প্রতিপক্ষের প্রতিক্রিয়ায় সাড়া দিতে—নিজ থেকে কিছু পরিকল্পনা করতে নয়। বল যেখানে গেছে, ফিল্ডার সেখানে; মাঠের মাঝখানে যেন আত্মবিশ্বাসহীন এক তরুণ নেতা।

হেডিংলি টেস্ট শেষ হলেও এর রেশ থাকবে আরও অনেকদিন। ভারতের কাছে এটি শুধুই একটি হারের গল্প নয়—এটি আত্মসমালোচনার, আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার এক বড় সুযোগ। আর ইংল্যান্ড? তারা টেস্ট ক্রিকেটের চিরাচরিত নিয়মকানুন ভেঙে আবারও প্রমাণ করল—এই সংস্করণেও তারা করতে পারে রূপকথার জন্ম।

Aucun commentaire trouvé


News Card Generator