ঢাকার প্রাণকেন্দ্র বাংলামোটরে অবস্থিত অভিজাত ভবন রূপায়ণ টাওয়ারের নিচতলায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ অন্যান্য নেতারা। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।
আজ মঙ্গলবার নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে তিনি হামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন। তিনি বলেন, "সমকালের ভিডিওতে দেখলাম বিস্ফোরণের সময় আখতার হোসেনসহ কয়েকজন নেতাকর্মী নিচে নামছিলেন। তারা অফিস শেষে নামার সময়েই বিস্ফোরণ ঘটেছে। ইতিমধ্যে জানা গেছে, বিস্ফোরণে অন্তত দুজন আহত হয়েছেন।"
তিনি দাবি করেন, "রূপায়ণ টাওয়ার একটি আধুনিক ও অভিজাত ভবন। সেখানে এবং আশপাশের ভবনে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। প্রশাসন চাইলে চিহ্নিত করতে পারবে, কারা এ বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত। এমনকি ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জড়িতদের শনাক্ত করা সম্ভব।"
রাশেদ খান এ ঘটনায় শুধু ক্ষোভই প্রকাশ করেননি, বরং অতীতের হামলার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তারও কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “ইতিপূর্বে গাজীপুরে এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহর গাড়িতে হামলা হয়েছিল। এখন পর্যন্ত সে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত প্রকাশিত হয়নি।"
তিনি স্পষ্ট করেন, একটির পর একটি হামলা হচ্ছে, কিন্তু বিচার হচ্ছে না। এভাবে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলতে থাকলে হামলাকারীরা আরও সাহস পাবে এবং ভবিষ্যতে বড় ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে। এ কারণে আমরা দাবি জানাচ্ছি— দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের গ্রেপ্তার করতে হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
রাশেদ খান এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও শাস্তির পাশাপাশি জনসাধারণকে সচেতন হওয়ার আহ্বানও জানান। তিনি লেখেন, যদি আমরা চুপ থাকি, তবে এসব হামলার শিকার হতে হতে একসময় আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়ব। জনগণের সামনে সত্য তুলে ধরতে হবে। প্রশাসনের দায়িত্ব শুধু প্রেসনোট দিয়ে দায় সারলেই চলবে না।
তিনি এটাও সতর্ক করে বলেন, এই ঘটনার যেন আগের ঘটনার মতো পরিণতি না হয়। আমরা কোনোভাবেই চুপ থাকব না। জনগণ আজ সচেতন, তারা সব দেখছে। কোনো অপরাধী ছাড়া পাবে না— এই বার্তা দিতে হবে প্রশাসনকেই।
রাশেদ খানের এমন হুঁশিয়ারিমূলক বক্তব্য ইতোমধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে সাড়া ফেলেছে। গণমাধ্যমে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই দাবি করছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব হামলা করা হচ্ছে। তবে কেউই এখনো স্পষ্ট করে দায় স্বীকার করেনি।
ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে কবে নাগাদ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে বা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সে বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সামগ্রিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর ওপর একের পর এক হামলার ঘটনা বাড়ছে। কিন্তু অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত ও বিচার না হওয়ায় জনমনে তৈরি হচ্ছে উদ্বেগ ও প্রশ্ন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের সহিংসতা যদি বারবার ঘটে এবং বিচার না হয়, তাহলে গণতন্ত্র ও রাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে যাবে।
রূপায়ণ টাওয়ারে বিস্ফোরণের ঘটনায় ইতোমধ্যে এনসিপি পক্ষ থেকেও আলাদা বিবৃতি আসতে পারে বলে জানা গেছে। আর প্রশাসনের কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ— দ্রুত তদন্ত করে সত্য উদঘাটন এবং দায়ীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা।