বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গন যখন উত্তপ্ত ও জর্জরিত অনিশ্চয়তায়, তখন চট্টগ্রামের একজন প্রভাবশালী আওয়ামীপন্থি আইনজীবীর একটি ভিডিও বার্তা রাতারাতি দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আর কেউ নন—চট্টগ্রাম আদালতের সাবেক অতিরিক্ত পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন।
গত শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও আপলোড করেন কামাল উদ্দিন। সেখানে তাকে স্পষ্ট ভাষায় বলতে শোনা যায়—"হাসিনা পালিয়েছে, আমিও পালাচ্ছি। তোমরাও পালাও!"
এই বক্তব্যের সাথে সাথে মুহূর্তেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ সংকট এবং নেতাকর্মীদের ভীতির একটি প্রতিচ্ছবি।
ভিডিও বার্তায় কী বলেছিলেন কামাল উদ্দিন?
কামাল উদ্দিন তার ভিডিওতে অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতারা নিজেরা জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে আপস করেছে, সুবিধা নিয়েছে, কিন্তু এখন সংকটকালীন মুহূর্তে তারা পালিয়ে গেছে। এরই প্রেক্ষিতে তিনি বলেন:
আমিও পালিয়ে যাচ্ছি। কারণ নেতারা তো আগে থেকেই পালিয়েছে। ইউনূস সরকার ক্ষমতায় আসবে, পাঁচ বছর ধরে আমাদের মারবে, আর বিএনপি এসে পরের পাঁচ বছর গুঁড়িয়ে দেবে।”
তিনি আরও বলেন,
তোরা নেতারা পালাইছোস, এখন কর্মীরা রাস্তায় পিটুনি খাচ্ছে। নেতাদের কেউ নেই, সবাই দৌড় দিয়েছে। ৩০০ এমপি পালিয়ে গেছে। আমি কাউকে গালি দিচ্ছি না, কিন্তু বাস্তবতা বলছি।”
ভিডিওতে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের উদ্দেশে তিনি নানা ধরণের ব্যঙ্গ ও কটাক্ষ ছুড়ে দেন এবং দলের দুঃসময়ে সাধারণ কর্মীদের অসহায় অবস্থার কথা তুলে ধরেন।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে পালানোর আহ্বান
এই আলোচিত ভিডিও বার্তার সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর অংশটি ছিল তার সরাসরি আহ্বান:
যারা যেখানে আছো, পালিয়ে যাও। আমি নিজেও পালিয়ে যাব। আমার ভুলত্রুটি থাকলে ক্ষমা করে দিও। হাসিনা পালিয়েছে, তার পরিবার পালিয়েছে, নেতাদের মা-বাবাও পালিয়েছে।”
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই বক্তব্য শুধু একজন হতাশ আইনজীবীর নয়, বরং এটি ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ ভাঙনের প্রতিচ্ছবি। এমন স্পষ্ট স্বীকারোক্তি আগে প্রকাশ্যে আসেনি।
কেন এই ভিডিও গুরুত্বপূর্ণ?
সাধারণত ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের ঘনিষ্ঠরা তাদের অবস্থান নিয়ে মুখ খোলেন না। কিন্তু একজন সাবেক অতিরিক্ত পিপি ও যুবলীগ নেতা যদি প্রকাশ্যে এই ধরনের ভাষায় নেতাদের সমালোচনা করেন এবং নিজেদের নিরাপত্তার প্রশ্নে "পালিয়ে যাওয়ার" কথা বলেন, তাহলে সেটি নিঃসন্দেহে একটি বড় ইঙ্গিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি দলটির মধ্যে হতাশা, নিরাপত্তাহীনতা এবং নেতৃত্বে আস্থাহীনতার প্রকাশ।
এই বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে যেমন আলোড়ন তুলেছে, তেমনি সাধারণ মানুষের মধ্যেও প্রশ্ন তুলেছে—আসলে কী হচ্ছে দেশের রাজনৈতিক পটভূমিতে?
যখন আওয়ামী লীগের নেতারা নিজেরাই পালিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন, তখন কর্মীরা আর কোথায় যাবে?
নির্বাচন, আন্দোলন ও নিরাপত্তাহীনতার এই সময়ে মোহাম্মদ কামাল উদ্দিনের ভিডিও একটি নতুন বিতর্ক ও বাস্তবতার দরজা খুলে দিয়েছে।