শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যু ও তার জানাজায় লাখো মানুষের উপস্থিতি সাম্প্রতিক বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা। রাজনীতিবিদ ও কলামিস্ট গোলাম মাওলা রনি তার সাম্প্রতিক ভিডিও বিশ্লেষণে এই আবেগের নেপথ্য কারণ, সমাজের বর্তমান মনস্তত্ত্ব এবং হাদিকে ঘিরে তৈরি হওয়া জাতীয় শোকের গভীর দিকগুলো তুলে ধরেছেন।
অপ্রত্যাশিত জাতীয় শোক গোলাম মাওলা রনি বলেন, জীবিত অবস্থায় ওসমান হাদির রাজনৈতিক বা সামাজিক পরিসর খুব একটা বড় ছিল না। তার এমপি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল খুবই ক্ষীণ। এমনকি তার কিছু বক্তব্যে অনেকে তার প্রতি বিরূপও ছিলেন। কিন্তু তার আহত হওয়া এবং পরবর্তীতে মৃত্যুর ঘটনাটি পুরো জাতির আবেগকে এক চরম পর্যায়ে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘‘আমি আমার জীবদ্দশায় এমন জানাজা দেখিনি, মানুষের এমন স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখিনি’’।
একই দিনে দুই মৃত্যু, দুই ভিন্ন চিত্র রনি তুলনা টেনে বলেন, একই দিনে মুক্তিযুদ্ধের উপ-অধিনায়ক, সাবেক মন্ত্রী ও এমপি এ কে খন্দকার ইন্তেকাল করেছেন। কিন্তু তাকে নিয়ে কোনো উচ্ছ্বাস বা বড় আয়োজন দেখা যায়নি। অথচ হাদির জন্য মানুষ যেভাবে রাস্তায় নেমেছে, তা এক বিস্ময়কর ঘটনা। তিনি মনে করেন, হাদির এই সংবর্ধনা আগামী দিনের রাজনীতিবিদদের জন্য একটি ‘থ্রেট’ বা সতর্কবার্তা।
পুঞ্জীভূত কান্না ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ এই আবেগের বৈজ্ঞানিক ও মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রনি বলেন, ‘‘মানুষ গত ১৫ বছর ধরে মানবিক মূল্যবোধের ওপর আসা আঘাতে বিপর্যস্ত। তাদের মধ্যে জমে আছে পুঞ্জীভূত কান্না ও ক্ষোভ, যা তারা স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ করতে পারছিল না।’’ হাদির মৃত্যু সেই কান্নার সুযোগ করে দিয়েছে। মানুষ যখন তার নিজের দুঃখ বা ক্ষোভ প্রকাশ করতে পারে না, তখন এমন কোনো ঘটনায় সম্মিলিতভাবে তা ফেটে পড়ে।
সমাজের বিভ্রান্তি ও হতাশা রনি বর্তমান সমাজের অবস্থাকে একাত্তরের চেয়েও খারাপ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘একাত্তরে মানুষ বিভ্রান্ত ছিল না, তাদের সামনে আশা ছিল। কিন্তু আজ ১৮ কোটি মানুষ চরম বিভ্রান্ত ও হতাশ। কেউ কাউকে নিরাপত্তা বা আশ্বাস দিতে পারছে না’’। এই হতাশা ও আতঙ্কের কারণেই মানুষ স্বাভাবিক আচরণ করছে না এবং হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।
গোলাম মাওলা রনি মনে করেন, হাদির মৃত্যু থেকে দাফন পর্যন্ত মানুষের এই প্রতিক্রিয়া প্রমাণ করে যে জাতি হিসেবে আমরা কেউ স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। তিনি মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন, যেন মানুষ তার মেরুদণ্ড ও মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার তৌফিক পায়।



















