এক চাঞ্চল্যকর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সেনাবাহিনীর ১০ জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনা হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে 'টিএফআই সেলে' গুম ও নির্যাতনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। এই মামলার মোট আসামির সংখ্যা ১৭ জন, যার মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও রয়েছেন।
সকাল ১০টা ২৩ মিনিটে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে সেনানিবাসের বিশেষ কারাগার থেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশ জেল-প্রিজন ভ্যান যোগে অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে নিয়ে আসা হয়। অভিযুক্ত কর্মকর্তারা হলেন—র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসরকালীন ছুটিতে), র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম।
আজ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এই মামলার অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। প্রথমে প্রসিকিউশন তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করবে, এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা শুনানি করবেন। মামলার অন্যতম পলাতক আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্যদের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবীরা (স্টেট ডিফেন্স) আইনি লড়াই চালাবেন।
এদিকে, সেনা কর্মকর্তাদের উপস্থিতি উপলক্ষে হাইকোর্টের মূল ফটক এবং ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখা গেছে। পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব এবং অতিরিক্ত গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সাদা পোশাকে ও পোশাকে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।
এর আগে, গত ২৩ নভেম্বর এ মামলার শুনানির জন্য আজকের দিনটি ধার্য করা হয়েছিল। সেই দিন ট্রাইব্যুনাল স্পষ্ট করে বলেছিলেন যে, আইন সবার জন্য সমান; সাবেক প্রধান বিচারপতি থেকে শুরু করে প্রাক্তন মন্ত্রীরাও সশরীরে আদালতে হাজির হচ্ছেন। এই নীতি অনুসারেই ১০ সেনা কর্মকর্তাকে হাজিরা দিতে হচ্ছে।
গুমের এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে আইনি লড়াইয়ের জন্য জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেডআই খান পান্নাকে স্টেট ডিফেন্স হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলেও তিনি মৌখিকভাবে মামলা থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন। গত ২২ অক্টোবর এই ১০ সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।



















