তখন আমি গুরুদয়াল সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট আর ভবিষ্যতের চিন্তায় মাথা যেন সবসময় ভারী থাকত। ঠিক সেই সময়, একদিন আমার প্রিয় বন্ধু রবিন—যে তখন ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজে অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ত—ফোন করে বলল, “চল, কোথাও একটু ঘুরে আসি। মনটাকে হালকা করা দরকার।”
দুজনেই বেশ কিছুক্ষণ ভাবনার পর ঠিক করলাম, আমরা গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকতে যাব। ভোরবেলা রওনা দিলাম। সারা পথ জুড়েই ছিল গল্প, হাসি আর প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে থাকা। গুলিয়াখালিতে পৌঁছেই আমরা মুগ্ধ হয়ে গেলাম—সবুজ ঘাসের গালিচা, জলের ওপর ঝুঁকে থাকা গাছ, আর দূরে সমুদ্রের গর্জন আমাদের এক নতুন জগতে নিয়ে গেল।
আমরা এক পাশে বসে সমুদ্রের ঢেউ দেখতে দেখতে গল্প করছিলাম। এমন সময়, এক তরুণী আমাদের দিকে এগিয়ে এল। তার পরনে ছিল হালকা রঙের পোশাক, মুখে ছিল একটা কোমল হাসি। সে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,“আপনি কি আমার একটা ছবি তুলে দেবেন?”আমি বিনয়ের সঙ্গে মাথা নেড়ে রাজি হয়ে গেলাম এবং তার সুন্দর মুহূর্তটি ক্যামেরায় ধরে দিলাম। ছবি দেখে সে খুশি হয়ে হেসে বলল,“ধন্যবাদ।”
ঘটনা তো খুবই স্বাভাবিক ছিল, কিন্তু আমার বন্ধু রবিন তো ছেড়ে দেওয়ার লোক না! সে মজা করে বলল,“তুই ত কোনো মেয়ের দিকে ভালো করে তাকিয়েই দেখিস না, আর আজ কিনা তার জন্য ছবি তুলে দিলি?”আমি কিছু বলার আগেই সে আবার বলে উঠল,“মেয়েটা কিন্তু সত্যিই সুন্দর ছিল। তোদের দুজনকে একসাথে বেশ মানাত।”
আমি হেসে জবাব দিলাম,“আমি তো শুধু সৌজন্যমূলকভাবে ছবি তুলে দিয়েছি। এর বাইরে কিছু না। আমি সবসময় চোখের হেফাজত করেই মেয়েদের সাথে কথা বলি।”
রবিন হেসে কাঁপতে লাগল, আর আমি হালকা লজ্জা নিয়ে চুপচাপ সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ঢেউ যেন তখন আমার হয়ে মৃদু শব্দে জবাব দিচ্ছিল।বিকেলের দিকে সূর্যটা হেলে পড়ছিল পশ্চিমে। আমাদের দুজনের মনে শান্তি, হাসি আর কিছু হালকা তির্যক মন্তব্যের স্মৃতি নিয়ে আমরা ফিরতি পথে পা বাড়ালাম।



















