close
ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!
গুলি কেন, ঘুম ভাঙেনি শহীদ রিয়াজের: বৈষম্যবিরোধী সংগ্রামের এক সাহসী যোদ্ধার গল্প
ফেসবুকে শেষ স্ট্যাটাস: ‘এই শহরে পাখিদের ঘুম ভাঙে গুলির শব্দে’
গত ২৯ জুলাই। ফেসবুক পেজ ‘ঋষি কাব্য’-তে সর্বশেষ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন কুমিল্লার কলেজ শিক্ষার্থী কাজী আশরাফ আহমেদ রিয়াজ। সেই পোস্টে যেন লুকিয়ে ছিল তার জীবনের শেষ অধ্যায়ের এক মর্মান্তিক ইঙ্গিত। এরপর আর কোনো শব্দেই ঘুম ভাঙেনি শহীদ রিয়াজের। তার ‘ঋষি কাব্য’ পেজেও আর কোনো আপডেট দেখা যায়নি।
অপ্রকাশিত নির্মমতার সাক্ষী রিয়াজ
৩১ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় রিয়াজের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ। ১ আগস্ট চুপিসারে তাকে দাফন করা হয় কুমিল্লার বাগরা গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে। পরিবারের অভিযোগ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চিত্র ধারণ এবং তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার কারণেই রিয়াজকে হত্যা করা হয়েছে।
রিয়াজের ফেসবুক পেজ ‘ঋষি কাব্য’ বৈষম্যের বিরুদ্ধে চলা ছাত্র আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম ছিল। সেখানে নিয়মিত আপলোড করা হতো ছাত্র আন্দোলনের নির্মম চিত্র।
একজন সাহসী যোদ্ধা: রিয়াজের জীবন
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার ব্যবসায়ী কাজী বাবুল ও রোকেয়া আক্তারের বড় ছেলে রিয়াজ। বাবা ফেনীতে কাপড়ের ব্যবসা করতেন। ঢাকার কমার্স কলেজে পড়াশোনা শেষে রিয়াজ পাটশালা ইউনিভার্সিটিতে ফটোগ্রাফি নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন।
ঢাকার মোহাম্মদপুরে বসিলায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন তিনি। ফটোগ্রাফি ছিল তার প্যাশন এবং ছাত্র আন্দোলনের প্রতি তার ছিল অগাধ ভালোবাসা। ক্যামেরায় ধারণ করতেন স্বৈরাচারী শাসনের নির্মমতার দৃশ্য।
পরিবারের অভিযোগ: বিশেষ বাহিনীর বর্বরতা
রিয়াজের পরিবারের দাবি, ৩০ জুলাই রাতে বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা রিয়াজকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। বর্বর নির্যাতনের পর তাকে হত্যা করে। পরদিন তার মরদেহ উদ্ধার করে স্বজনরা।
রিয়াজের বাবা কাজী বাবুল বলেন, “আমার ছেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেছে। তার ছবি সরকারকে ক্ষিপ্ত করেছে। ২৯ জুলাই ফোনে সে জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে হুমকি দিচ্ছে। এরপর তার জীবনে নেমে আসে ভয়ঙ্কর পরিণতি।”
এলাকার মানুষের ক্ষোভ ও দাবি
এলাকার মানুষের মতে, রিয়াজের ক্যামেরায় বন্দী হওয়া নির্মমতার দৃশ্যই তার মৃত্যুর কারণ। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
রিয়াজের মায়ের আর্তনাদ
মা রোকেয়া আক্তার বলেন, “আমার ছেলে শুধু ছবি তুলেছে। আহত ছাত্রদের ছবি দেখে অন্যরা তাদের পাশে দাঁড়াত। সে সাহসের প্রতীক ছিল। আজ তার মতো একজন নির্ভীক যোদ্ধাকে হারালাম।”
ছোট ভাইয়ের শোক
রিয়াজের ছোট ভাই কাজী আব্দুল্লাহ শান্ত, ফেনী পলিটেকনিকে প্রথম বর্ষের ছাত্র। তিনি বলেন, “আমার ভাই আমাদের পরিবারের গর্ব ছিল। তাকে যারা মেরেছে, তাদের বিচার চাই।”
বিচার হবে তো?
নিহত রিয়াজের পরিবারের দাবি, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে স্বৈরশাসক সরকারের ইন্ধন রয়েছে। তাদের প্রত্যাশা, দোষীরা যেন শাস্তি থেকে বাঁচতে না পারে।
শেষ কথা:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতীক হয়ে থাকা রিয়াজের মৃত্যু কেবল একটি পরিবারের নয়, গোটা সমাজের জন্যই এক মর্মান্তিক ক্ষতি। এই সাহসী যোদ্ধার জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা না হলে, ভবিষ্যতে কোনো সত্যপ্রত্যাশী কলম বা ক্যামেরা সাহস করবে কি?
Geen reacties gevonden