রবিবার ভোরে বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে এক অদ্ভুত ঘটনা—ইরানের তিনটি গোপন পারমাণবিক স্থাপনায় নিখুঁত ও সফল বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। লক্ষ্যবস্তু ছিল নাতাঞ্জ, ফোরদো ও ইসফাহান। কিন্তু এই হামলার প্রকৃত বিস্ময় ছিল যেটি দিয়ে তা পরিচালিত হলো—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোপন অস্ত্র B-2 Stealth Bomber!
এই যুদ্ধবিমানকে বলা হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির এক নিঃশব্দ ঘাতক। প্রায় দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে তৈরি এই বিমান এতটাই শক্তিশালী, গোপন ও আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন যে, এটি গোটা বিশ্বে উড়ে বেড়াতে পারে রাডারে ধরা না পড়ে! কী এমন আছে এই বিমানে যা একে করে তোলে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর যুদ্ধযান? চলুন জেনে নিই এক নজরে।
B-2 স্টেলথ বোমারু বিমানের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—রাডার ফাঁকি দিয়ে সম্পূর্ণ অদৃশ্য অবস্থায় চলাফেরা। এই বিমানটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে এটি কোনো সাধারণ রাডারে ধরা পড়ে না। এটি যেন আকাশে এক অদৃশ্য ছায়া, শত্রুর পক্ষে খুঁজে বের করাই অসম্ভব।
B-2 এমনভাবে ডিজাইন করা যে, এটি একটানা ৬০০০ নটিক্যাল মাইল (প্রায় ১১ হাজার কিলোমিটার) উড়তে পারে জ্বালানি পুনরায় না ভরেই। তবু যদি দরকার হয়, আকাশে জ্বালানি ভরার প্রযুক্তিও এতে রয়েছে, ফলে পথ বলতে কোনো বাধা নেই।
বিশ্বের যেকোনো আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে এয়ার স্পেসে ঢুকে যেতে পারে এই বোমারু বিমান। এটি কার্যত বাধাহীন এবং সীমাহীনভাবে চলতে পারে সব অক্ষাংশে, এমনকি শত্রুপক্ষ বুঝে ওঠার আগেই ধ্বংস করে দিতে পারে লক্ষ্য।
B-2 স্টেলথ বোমার একটি ভয়ঙ্কর দিক হচ্ছে এর পেলোড ক্ষমতা। এটি বহন করতে পারে ৪০,০০০ পাউন্ড পর্যন্ত অস্ত্র, যার মধ্যে রয়েছে দুটি করে ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা। এই বোমাগুলো এতটাই শক্তিশালী যে, মাটির নিচে থাকা সুরক্ষিত ঘাঁটিও ধ্বংস করে দিতে পারে।
এই বিমানটি পুরোপুরি জিপিএস নির্ভর। এতে রয়েছে উন্নতমানের সেন্সর, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সিস্টেম এবং স্বয়ংক্রিয় হামলার সক্ষমতা। মাত্র দুই জন ক্রু এই ভয়ঙ্কর বিমানটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, যা একে আরও কার্যকর ও গোপন রাখে।
B-2 কেবল প্রচলিত বোমাই নয়, বরং এটি পারমাণবিক অস্ত্রও বহনে সক্ষম। এটি যে-কোনো অঞ্চলে প্রবেশ করে খুব দ্রুত হামলা চালাতে পারে, আর এই কারণেই এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও ভয়ঙ্কর আকাশঘাতী অস্ত্র।
ইরানের গোপন পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার জন্য এই বিমান ব্যবহৃত হওয়ায় বিশ্বজুড়ে আবারও আলোচনায় এসেছে B-2 স্টেলথ বোমারু। এটি দেখিয়েছে যে, আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে কারিগরি শ্রেষ্ঠত্বই সবকিছুকে ছাপিয়ে যেতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা এক নতুন ভূ-রাজনৈতিক বার্তা বহন করে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র তার “অদৃশ্য অস্ত্র” দিয়ে যে-কোনো সময় যে-কোনো জায়গায় ঘায়েল করতে পারে শত্রুপক্ষকে—তাও কোনও পূর্ব-বার্তা ছাড়াই।
B-2 স্টেলথ বোমারু যুদ্ধবিমান শুধু একটি অস্ত্র নয়—এটি আধুনিক সামরিক প্রযুক্তির শীর্ষ প্রতীক। রাডারে দেখা যায় না, বিপুল পেলোড বহনে সক্ষম, পারমাণবিক ও প্রচলিত অস্ত্র বহনের ক্ষমতা, দূরপাল্লায় জ্বালানি ছাড়াই উড়তে সক্ষম—সব মিলিয়ে এটি এক আধুনিক দিনের ভয়ঙ্করতম যুদ্ধযান।
এমন ‘অদৃশ্য শিকারি’র উপস্থিতি গোটা বিশ্বকে একটি বার্তাই দেয়—প্রযুক্তির কাছে পর্দা ফাঁস হওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র।



















