গণহত্যা ও দুঃশাসনের অপরাধে দল নিষিদ্ধ হওয়া এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার..

Bokhtiar Shamim avatar   
Bokhtiar Shamim
কোনো দল গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও দুঃশাসনের দায়ে নিষিদ্ধ হয়, তাহলে সেই দলের বিচার হওয়া অত্যন্ত জরুরি, যারা এই দেশের স্বাধীনতা কখনো চায়নি। যে দলটি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী হয়ে এ দেশের..

যখন একটি শাসক ষোলো বছরের শাসনে পরিণত হয় এক স্বৈরাচারে—যার হাতে লেগে থাকে ছাত্রদের রক্ত, যার পায়ে গুম আর হত্যার ছাপ, যার শাসন হয়ে ওঠে ইতিহাসের ওপর এক ঘন অন্ধকার ছায়া—তখন সেই শাসকের পতন শুধু একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, তা হয়ে ওঠে সময়ের দাবি, জনগণের শুদ্ধিকরণ, এবং জাতির বিবেকের জাগরণ।

 

৫ জুলাই ২০২৪, সেই দাবি পূরণ করেছে এই দেশের মানুষ। ছাত্র জনতার দীর্ঘদিনের লড়াই ও গণআন্দোলনের উত্তাপে একটি বিপ্লব ঘটে আর মুহূর্তের মধ্যে দীর্ঘ ১৬ বছরের এক পালিয়ে যাওয়া ভয়াল দুঃশাসক ও দুঃশাসনের পতন ঘটেছে, যেটি ছিল নির্যাতনের, আত্মসমর্পণের এবং রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জনগণের ওপর চালানো এক বর্বর অভিজান। এই নির্মম ভয়ংকর অত্যাচারের নিশংস অপরাধে অপরাধী হয়ে এই দুঃশাসকের দল যদি নিষিদ্ধ হয় তাহলে 

 

কিন্তু প্রশ্ন এখানে থেমে থাকে না।

 

যে দল ইতিহাসকে একটি ঘোষণা বানিয়ে পুরো মুক্তিযুদ্ধের ত্যাগকে অস্বীকার করে, যারা জাতীয় সংগীতকে গোনাহ আখ্যা দেয়, পতাকার লাল রঙে শত্রু খুঁজে পায়, শহীদের রক্তকে বলে ‘গণ্ডগোল’, ইসলামের ছায়ায় দাঁড়িয়ে ইতিহাস বিকৃত করে, যারা দাঁড়ায় না জাতীয় সংগীতের সময় অথচ পতাকার পাশে ছবি তোলে—তাদের এখনো রাজনীতির ময়দানে টিকে থাকা মানে মুক্তিযুদ্ধকে অপমান করা, শহীদের আত্মাকে আহত করা।

 

আরও গভীর সংকট জন্ম নেয় যখন সেই একই শক্তি, যারা একদিন এই দেশের জন্মকে অস্বীকার করেছিল, এই ভূখণ্ডকে মানতে পারেনি, যারা ১৯৭১ সালে শত্রুদের দোসর ছিল, তারা এখন এই দেশের রাজনীতিতে অংশ নিতে চায়, ক্ষমতার ভাগ দাবি করে।

১৯৮৬ সাল থেকে তারা নতুন মুখোশে ফিরে এসেছে—দীর্ঘ ৫৪ বছরের ইতিহাসের পেছনে লুকিয়ে থাকা চক্রান্ত আবারও জাতিকে বিভ্রান্ত করছে।

 

এটা শুধু রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র নয়, এটা ইতিহাসের পবিত্র শরীরে ছোঁড়া এক ঘৃণ্য কলঙ্ক।

 

এই কলঙ্ক মোচনের সময় এখন।

জাতিকে তার আত্মার প্রশ্ন শুনতে হবে—"আমরা কার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম?"

 

যদি সেই শক্তির অস্তিত্ব এখনো রাষ্ট্রের আশীর্বাদে টিকে থাকে, যদি তাদের রাজনীতি করার অধিকার নিশ্চিত করা হয়, তবে ২ লক্ষ বীরাঙ্গনার আত্মত্যাগ লজ্জিত হবে, শহীদদের রক্ত অপচয় হবে, মুক্তিযুদ্ধের মহান অধ্যায় একটি তামাশায় পরিণত হবে। ইতিহাস নিশ্চুপ থাকবে না—সে রক্ত চায়, জবাব চায়, বিচার চায়।

 

এই পথ পরিষ্কার করতে হবে। ইতিহাসের ময়লা ঝেড়ে, সময়ের অন্ধকার পেরিয়ে, সত্যের আলোয় জাতিকে ফেরাতে হবে। শহীদের কবর যেন আলোয় জ্বলে ওঠে, বীরাঙ্গনাদের মুখ যেন গর্বে উজ্জ্বল হয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যেন আর একবার ধ্বনিত হয়।

 

এই প্রশ্ন এখন আর কেবল বাংলাদেশের নয়, এটি মানবতার প্রশ্ন। এটি ইতিহাসের কাছে, বিবেকবান মানুষের কাছে, বিশ্ববাসীর কাছে ছুঁড়ে দেওয়া এক নির্দয় কিন্তু অনিবার্য প্রশ্ন—

 

"যারা দেশের জন্ম অস্বীকার করেছিল, তারা কিভাবে এ দেশের ভাগ্যে অংশ নিতে পারে?"

Walang nakitang komento


News Card Generator