close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

ঘুষ না দিলে চাকরি নেই!” — নীলফামারীর স্কুলে তিন শিক্ষকের ২০ বছরের পরিশ্রম মুছে দিলেন সাবেক সভাপতি..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
২০ বছর বিনা বেতনে কাজ করার পরও ঘুষ না দিতে পারায় তিন শিক্ষককে বরখাস্ত করলেন নীলফামারীর একটি স্কুলের সাবেক সভাপতি। তাদের এমপিও করার জন্য দাবি করা হয় লাখ লাখ টাকা। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্..

২০ বছর ধরে বিনা বেতনে কাজ, তবুও চাকরি হারালেন ঘুষ না দিতে পারায় — নীলফামারীতে শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র

ঘুষ দিতে না পারায় চাকরি হারাতে হলো তিনজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষককে—যারা ২০ বছর ধরে বিনা বেতনে একটি স্কুলে শিক্ষকতা করে আসছিলেন। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া দোলাপাড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এই লজ্জাজনক ঘটনা ঘটে। অভিযোগের তীর বিদ্যালয়ের সাবেক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দিকে, যিনি ঘুষের টাকা না পেয়ে তিন শিক্ষককে এক প্রকার জোর করেই অব্যাহতি দিয়েছেন।

চাকরি হারানো তিন শিক্ষকের জীবন আজ দুর্বিষহ। তাদের একজন, মৌলভী ছয়ফুল ইসলাম, এখন রংপুরের সিও বাজারে রিকশার গ্যারেজ চালান। কান্নাভেজা কণ্ঠে তিনি বলেন, “আমার চাকরির সময় সভাপতি শাহ আলম আমার কাছ থেকে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। বাড়ির ভিটেমাটি বিক্রি করে আমি সেই টাকা জোগাড় করি। কিন্তু যখন এমপিও করার সময় আসে, তখন তিনি আরও ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। আমি দিতে পারিনি, তাই আমাকে বাদ দিয়ে দিলেন।”

অন্যদিকে, গণিত শিক্ষক লাইসুজ্জামান বলেন, “আমি আর আমার স্ত্রী দুজনেই ঐ স্কুলে কাজ করতাম। আমরা মিলে ৮ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। পরে এমপিওর আগে আরও ২৪ লাখ টাকা চাওয়া হয়। এত টাকা কোথা থেকে দেবো? আমরা দিতে পারিনি, তাই আমাদেরও বাদ দিয়ে দেয়া হয়।”

নীতিমালার অপব্যবহার ও ভূয়া তালিকাভুক্তির অভিযোগ

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, কোনো শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করতে হলে ২০১৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ব্যানবেইস-এর তালিকায় অন্তত তিন অর্থবছরে নাম থাকতে হয়। অথচ এই তিন শিক্ষক শুধু ২০২৪ সালের তালিকায় রয়েছেন, আগের কোনও বছরের তালিকায় তাঁদের নাম নেই।

এ প্রসঙ্গে রংপুরের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা উপ-পরিচালক মোছা. রোকসানা বেগম বলেন, “তালিকায় তাদের নাম নেই বলেই তাদের এমপিওর ফাইল ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। আরও অনেক অনিয়ম থাকতে পারে। যে ফাইল যাচাই করে পাঠিয়েছে, তারা এত ত্রুটিপূর্ণ ফাইল কীভাবে পাঠালেন, বুঝতে পারছি না।”

সাবেক সভাপতির মন্তব্যে বিস্ময়

এই অভিযোগ নিয়ে যখন সাবেক সভাপতি শাহ আলমের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি বলেন, “ভাই, এগুলো বাদ দিন। একটা প্রতিষ্ঠান অনেক কষ্ট করে তৈরি করতে হয়। টাকা ছাড়া কিছুই হয় না। নিয়মের মধ্যে থেকে সব সম্ভব হয় না।”

এই মন্তব্যই যেন তার দৃষ্টিভঙ্গির নগ্ন প্রকাশ—ঘুষকে তিনি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের স্বাভাবিক মাধ্যম হিসেবে দেখছেন।

উপজেলা প্রশাসন ও জেলা শিক্ষা দপ্তরের প্রতিক্রিয়া

এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মৌসুমী হক বলেন, “সাবেক সভাপতির বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ এসেছে। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

নীলফামারী জেলা শিক্ষা অফিসার হাফিজুর রহমান জানান, “বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তানজিলা আক্তার কার্যত নির্বিকার। তার স্বামী ও সাবেক সভাপতি শাহ আলমই সবকিছু পরিচালনা করেন। তিনি আমার স্বাক্ষর নকল করে কাগজপত্র পাঠিয়েছেন ডিডি অফিসে। তদন্তের পর কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের নির্লিপ্ততা প্রশ্নবিদ্ধ

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে যখন অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়, তিনি সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান। অথচ তিনিই ছিলেন যাচাই-বাছাইয়ের মূল দায়িত্বে।


উপসংহার:

এই ঘটনাটি শুধু নীলফামারী নয়, পুরো দেশের শিক্ষাব্যবস্থার জন্যই একটি অশনিসঙ্কেত। শিক্ষকতা, যা একটি মহৎ পেশা বলে বিবেচিত, সেখানে যদি ঘুষ ছাড়া টিকে থাকা না যায়, তবে আগামী প্রজন্ম কীভাবে গড়ে উঠবে? সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।

No se encontraron comentarios


News Card Generator