জাহাঙ্গীর আলম
🟥 গাজীপুরে কারখানার ভিতরে পিটিয়ে হত্যা: একটি গরিব ছেলের স্বপ্নের নিষ্ঠুর ভাঙন
✍️ বিশেষ প্রতিবেদন
সে ছিল একজন মেকানিক—ইলেকট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্টে কাজ করত। নাম হৃদয়, বয়স মাত্র ১৯। স্বপ্ন ছিল একটাই—একটা মোটরসাইকেল কিনবে। ঈদের দিন মা আর বোনকে তুলে ঘুরাবে।
কিন্তু তার আগে মালিকের চোখে সে ছিল—গরিব, মজুর, মিস্ত্রি। আর এই পরিচয়ের দাম? একটি ভুল নির্দেশনা পালন করার অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা।
🔧 ঘটনাস্থল: গাজীপুর, কোনাবাড়ি, গ্রিনল্যান্ড পোশাক কারখানা
শনিবার সকাল। কারখানায় নাকি কিছু গোলমাল হয়। বলা হয়, হৃদয় অফিসিয়াল অনুমতি না নিয়েই একটি ইলেকট্রিক কাজ করেছেন।
সহকর্মীরা বলছেন, সে শুধু যা খারাপ হয়েছিল ঠিক করছিল। অথচ মালিকপক্ষের ভাষ্য, সে ‘অর্ডার অমান্য’ করেছে। এবং সেই অমান্যের মূল্য দিতে হয় শরীর দিয়ে।
তাকে ডেকে পাঠানো হয় অফিসে। দরজা বন্ধ হয়।
তারপর শুরু হয় লোহার রড, পাইপ, বুট আর ঘুষির উৎসব।
এক সহকর্মী কাঁপা গলায় দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে বলেছিল,
— “ভাই, বাঁচান, ওরে মারতেছে।”
জবাব এসেছিল,
— “তোদেরও উচিত শিক্ষা দিতে হবে।”
প্রায় এক ঘণ্টা পর, হৃদয়ের নিথর দেহ পড়ে থাকে কারখানার পেছনের ঘরে।
হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার ঘোষণা করেন:
“ডেড অন অ্যারাইভাল”।
চোখ অর্ধ খোলা, এক হাত মুঠো করা—মনে হচ্ছিল কিছু বলতে চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি।
🎭 ‘অসুস্থ হয়ে মৃত্যু’, আর মালিকের মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট
ঘটনার পরে উঠে পড়ে লাগে মালিকপক্ষ।
পুলিশ আসে, ফাইল তৈরি হয়—“অসুস্থ হয়ে মৃত্যু”।
মিডিয়ায় চলে ‘ব্যবস্থাপনার রাজনীতি’।
একটি জাতীয় দৈনিক এমন শিরোনাম দেয়—
“একটি মহল বেতন না বাড়ানোর ইস্যুতে কারখানায় উত্তেজনা ছড়াতে চায়”
—সেখানে হৃদয়ের নামও নেই।
রাষ্ট্রীয় যন্ত্রও সক্রিয় হয়।
কিছু শ্রমিক জেনেশুনে প্রতিবাদ করতে চায়,
তাদের সামনে দাঁড়ায় পুলিশ, র্যাব, জলকামান।
🕯️ কবর হয়, উত্তর আসে না
হৃদয়কে দাফন করা হয় সন্ধ্যাবেলা।
চারজন শ্রমিক কাঁধ দেয়।
ভাই ফোনে কান্না চেপে রাখে—সে তখন মালয়েশিয়ায়।
মা শুধু চিৎকার করে বলে—
“আমার ছেলে অসুস্থ ছিল না! ওরে পিটায়ে মারছে... ওর মুখের উপরে পা দিছে!”
আরও একবার বলে—
“ওরে মারলো ক্যান গো? সে কি মানুষ আছিল না?”
কিন্তু কেউ উত্তর দেয় না।
❗ প্রশ্ন রয়ে যায়:
-
কী অপরাধ ছিল হৃদয়ের?
-
গরিব হলে কি ন্যায্যতা চাওয়ার অধিকার থাকে না?
-
শ্রমিক মরলে শুধু একটি রিপোর্ট, একটি এন্ট্রি, একটা খালি বিছানা—এটাই কি তার পাওনা?
📣 এই প্রতিবেদনটি কোনো রাজনীতি নয়, একটি মায়ের হারানো ছেলের গল্প।
একটি শ্রমিকের রক্তাক্ত বাস্তবতা।
এটি গর্জে উঠার সময়—কারণ আজ হৃদয়, কাল আপনি বা আপনার ভাই।