close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

গাজার ৭৭ শতাংশ দখল করেছে ইসরাইল

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
গাজা ভূখণ্ডের ৭৭ শতাংশ ইতিমধ্যে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। একের পর এক বিমান হামলায় ধ্বংস হচ্ছে ঘরবাড়ি, প্রাণ হারাচ্ছে সাংবাদিক থেকে সাধারণ মানুষ। হামাস প্রতিরোধ চালিয়ে গেলেও ভয়াবহ মানবিক বিপর্য..

ইসরাইলের দখলে গাজার ৭৭ শতাংশ এলাকা: বাড়ছে মৃত্যু, ধ্বংস আর আতঙ্ক

গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরাইলি অভিযানে ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা প্রতিদিনই ভয়াবহ হয়ে উঠছে। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, গাজার মোট ভূখণ্ডের প্রায় ৭৭ শতাংশ ইতোমধ্যে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী।

এক বিবৃতিতে হামাস জানায়, ইসরাইল পরিকল্পিতভাবে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সাধারণ মানুষকে তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য করছে। এর মাধ্যমে একপ্রকার দখল প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। ফিলিস্তিনি বেসামরিক জনগণ উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছে, আর তাদের পেছনে রয়ে যাচ্ছে ধ্বংসপ্রাপ্ত নগর।

হামলার বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিরোধ

রোববার (২৫ মে) হামাসের সশস্ত্র শাখা ও ইসলামিক জিহাদ গোষ্ঠী যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা গাজার বিভিন্ন এলাকায় ইসরাইলি বাহিনীর বিরুদ্ধে বোমা হামলা, ট্যাংকবিধ্বংসী রকেট হামলা এবং গোপন কৌশলে চোরাগোপ্তা আক্রমণ চালিয়েছে।

তাদের দাবি অনুযায়ী, বেশ কিছু জায়গায় ইসরাইলি সামরিক ইউনিট বাধার মুখে পড়েছে এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে এসব প্রতিরোধ সত্ত্বেও দখলদারিত্বের গতি থামছে না।

নতুন করে হামলা, নিহত আরও ২৩ জন

গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, রোববার নতুন করে চালানো একাধিক বিমান হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৩ জন। নিহতদের মধ্যে সাংবাদিক, নারী, শিশু এবং উদ্ধারকর্মীরাও রয়েছেন।

উত্তর গাজার জাবালিয়ায় বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন সাংবাদিক হাসান মাজদি আবু ওয়ারদা ও তার পরিবারের কয়েকজন সদস্য। তাদের বাড়ির ওপর সরাসরি বোমা নিক্ষেপ করে ইসরাইলি বিমান। এই ঘটনায় গাজায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা দাঁড়াল ২২০-তে।

খান ইউনিস ও নুসরেইতে ধ্বংসযজ্ঞ

দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস, মধ্য গাজার নুসরেইত এবং উত্তরের জাবালিয়ায় আঘাত হানার ফলে কয়েক ডজন ভবন ধসে পড়েছে। উদ্ধারকারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে কাজ করছেন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ইসরাইলি বাহিনী সাধারণ মানুষের চলাচলের পথ বন্ধ করে দিচ্ছে, খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ প্রায় বন্ধ। অনেক পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ের অভাবে খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপন করছে।

কেন ভেঙে গেল যুদ্ধবিরতি?

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরাইলে প্রবেশ করে ভয়াবহ হামলা চালায়, যাতে ১২০০ জন নিহত হন এবং দুই শতাধিক ইসরাইলি জিম্মি হয়। ওই ঘটনার জেরে শুরু হয় দীর্ঘমেয়াদি সামরিক অভিযান।

এরপর কাতারের মধ্যস্থতায় এবং যুক্তরাষ্ট্র ও মিশরের সহায়তায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে একটি যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে কিছুদিনের জন্য পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়। কিন্তু হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্তি নিয়ে মতানৈক্যের কারণে সেই যুদ্ধবিরতি ভেঙে যায়। এরপর ইসরাইল আবার পূর্ণ মাত্রায় সামরিক অভিযান শুরু করে।

মানবিক সংকটের মুখে গাজা

জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করছে। তবে আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও ইসরাইল তাদের সামরিক অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে বিভিন্ন স্কুল ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে, যেখানে নেই নিরাপত্তা, খাদ্য, কিংবা চিকিৎসাসেবা। বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজার ৭৭ শতাংশ এলাকা দখলের অর্থই হলো — ফিলিস্তিনিদের জীবনযাত্রার ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা।


 

ইসরাইল ও হামাসের এই সংঘাত এখন আর শুধু সামরিক যুদ্ধ নয়, এটি একটি মানবিক বিপর্যয়। প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু, কমছে জীবনের সম্ভাবনা। গাজা যেন আজ এক জীবন্ত কবরস্থান — যেখানে বেঁচে থাকাটাই সবচেয়ে বড় যুদ্ধ।

Nessun commento trovato