close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

গাজায় রক্তপাত বন্ধ নয়, কেবল সাময়িক বিরতি! বন্দি বিনিময়ের শর্তে নেতানিয়াহুর অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির বার্তা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ঘোষণা দিলেন—হামাস পুরোপুরি ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত গাজায় যুদ্ধ থামবে না। তবে বন্দি বিনিময়ের শর্তে সাময়িক যুদ্ধবিরতির ইঙ্গিত। গত ২৪ ঘণ্টায় নিহত আরও ৮১ ফিলিস্তিনি।..

গাজায় রক্তপাত থামছে না: যুদ্ধ থামানোর কোনো পরিকল্পনা নেই, বললেন নেতানিয়াহু—শুধু ‘বন্দি বিনিময়ের’ সাময়িক বিরতি হতে পারে

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন অব্যাহত থাকছে, এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন—এই সামরিক অভিযান পুরোপুরি থামবে না। তবে তিনি বন্দি বিনিময়ের শর্তে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনার কথা ভাবছেন। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংকট আরও ঘনীভূত হলো।

বুধবার (১৪ মে) আহত ইসরাইলি সেনাদের সঙ্গে সাক্ষাতে নেতানিয়াহু বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য দুটি—হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা এবং গাজায় আটক সকল ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্ত করা। এই দুইটি একসঙ্গে অর্জন করতেই হবে। যদি হামাস বলে আরও দশজন বন্দি মুক্তি দেবে, তারপরও যুদ্ধ বন্ধ করব না।”

তিনি আরও বলেন, “যদি বন্দি মুক্তির বিষয়টি সামনে আসে, তাহলে কেবল তখনই আমরা একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে যেতে পারি। তবে এটি স্থায়ী সমাধান নয়। আমাদের লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।”

কাতারে আলোচনা, আমেরিকার তৎপরতা

নেতানিয়াহুর ঘোষণার পরপরই ইসরাইল একটি উচ্চপর্যায়ের আলোচক দলকে কাতারের রাজধানী দোহায় পাঠিয়েছে। সেখানে বন্দি বিনিময় ও সাময়িক যুদ্ধবিরতির সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে। মার্কিন কূটনৈতিক তৎপরতার অংশ হিসেবে এই আলোচক দল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দোহায় অবস্থান করবে।

দোহা-ভিত্তিক আলোচনায় ইসরাইলের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, কাতার এবং মিসরের মধ্যস্থতায় একটি নিরাপদ সমঝোতা গঠনের চেষ্টা চলছে। তবে হামাসের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া যায়নি।

২৪ ঘণ্টায় নিহত ৮১ জন, হাসপাতালেও হামলা

ইসরাইলি বাহিনীর সর্বশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৮১ জন ফিলিস্তিনি। এর মধ্যে উত্তর গাজায় বিমান হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫১ জন এবং দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসের একটি হাসপাতালের ওপর চালানো হামলায় মারা গেছেন আরও ৩০ জন।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া সামরিক অভিযানে এ পর্যন্ত মোট ৫২ হাজার ৯০৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ১৯ হাজার ৭২১ জন। এসব হামলায় বহু শিশু ও নারী প্রাণ হারিয়েছেন।

বাস্তুচ্যুতি ও ধ্বংসস্তূপে পরিণত গাজা

জাতিসংঘ জানায়, ইসরাইলি হামলার ফলে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। শহরের প্রধান সড়ক, স্কুল, হাসপাতাল, পানি সরবরাহ লাইন ও বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। অনেক এলাকা এখন বাসযোগ্য নয়।

ইসরাইলের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, তারা শুধু সন্ত্রাসী অবস্থান ও গোপন টানেল লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। কিন্তু মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এসব হামলায় সাধারণ মানুষই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক আদালতের পরোয়ানা ও মামলার চাপে ইসরাইল

২০২৩ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

এছাড়া আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (ICJ) ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মামলা চলছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরাইলের আচরণকে ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ’ বলে সমালোচনা করলেও তেলআবিব সরকারের অবস্থান অনড়।

গাজায় আবারও রক্তাক্ত মার্চ

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে ইসরাইল একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। প্রায় দুই মাস গাজায় তুলনামূলক শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করলেও মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে আবারও বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইল। নতুন করে শুরু হওয়া হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন আরও ২ হাজার ৭৮০ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন অন্তত ৭ হাজার ৭০০ জন।

 

নেতানিয়াহুর ‘অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির’ ইঙ্গিত গাজায় সাধারণ মানুষের জন্য সাময়িক স্বস্তি আনতে পারে। তবে যুদ্ধ সম্পূর্ণ বন্ধের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। যতক্ষণ না হামাস ধ্বংস ও জিম্মিরা মুক্ত হচ্ছে, ততক্ষণ ইসরাইল যুদ্ধ চালিয়ে যাবে—এই বার্তাই স্পষ্টভাবে দিয়েছেন নেতানিয়াহু।

Ingen kommentarer fundet