close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

গাজায় রক্তগঙ্গা অব্যাহত: একদিনে নিহত আরও ৩৯, প্রাণহানি ছাড়াল ৫০ হাজার!..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইসরায়েলের লাগাতার বোমা বর্ষণে মৃত্যুপুরীতে রূপ নিয়েছে গাজা উপত্যকা। গত ২৪ ঘণ্টায় নিহত ৩৯ জনসহ মোট প্রাণহানি ছাড়িয়েছে ৫০ হাজার ৯৮৩-এ। বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া বহু মানুষ এখনও নিখোঁজ।..

মৃত্যুপুরীতে গাজা: একদিনেই ৩৯ জন নিহত, যুদ্ধের আগুনে পুড়ছে এক জাতি

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অব্যাহত বিমান হামলায় ফিলিস্তিনিদের মৃত্যু মিছিল যেন শেষ হবার নয়। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও অন্তত ৩৯ জন নিরীহ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং গুরুতর আহত হয়েছেন আরও ১১৮ জন। এ নিয়ে ৭ অক্টোবর ২০২৩ সাল থেকে শুরু হওয়া সামরিক অভিযানেই গাজায় মোট প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৯৮৩ জনে।

এই ভয়াবহ তথ্য প্রকাশ করেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তুরস্কভিত্তিক বার্তাসংস্থা আনাদোলুর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আহতদের মধ্যে বহুজনের অবস্থা সংকটজনক, যাদের অনেকেই মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। এছাড়া ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও অসংখ্য মানুষ চাপা পড়ে আছেন—কারও জীবনের আশা নেই, কেউবা এখনও উদ্ধারকারীদের অপেক্ষায়।

 মৃতের মিছিল, বেঁচে থাকাদের আর্তনাদ

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলমান সংঘাতে এ পর্যন্ত আহত হয়েছেন অন্তত ১ লাখ ১৬ হাজার ২৭৪ জন। বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ, কারণ বহু মানুষ এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবন, হাসপাতাল ও সড়কে ছড়িয়ে আছে রক্তাক্ত শরীর। উদ্ধারকারীরা নিরলস প্রচেষ্টা চালালেও, ইসরায়েলের টানা বিমান হামলার কারণে অনেক জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।

 যুদ্ধবিরতি ভেঙে ফের আগ্রাসন

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর শুরু হওয়া এই সংঘাত পরে রূপ নেয় পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০২৪ সালের ১৯ জানুয়ারি ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও, যুদ্ধ থেমে থাকেনি। গত ১৮ মার্চ গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার নিয়ে মতানৈক্যের জেরে আবারও যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইসরায়েল।

ফলাফল ভয়ানক: গত এক মাসেই নিহত হয়েছেন আরও ১ হাজার ৬১৩ জন ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন ৪ হাজার ২০০ জনের বেশি। প্রতিদিন বেড়ে চলেছে হতাহতের সংখ্যা।

 ধ্বংসস্তূপে রূপান্তরিত গাজা

জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। অঞ্চলটির অন্তত ৬০ শতাংশ অবকাঠামো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। ধ্বংসের তালিকায় রয়েছে হাসপাতাল, স্কুল, আবাসিক ভবন, পানি সরবরাহ ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও।

গাজার বহু শিশু, নারী ও বৃদ্ধ এই নির্মম আগ্রাসনের শিকার। আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলো এই ঘটনাকে "মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ" বলে আখ্যা দিয়েছে।

 নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

২০২৩ সালের নভেম্বরেই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা চলমান রয়েছে।

 বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া, কিন্তু সহায়তা পৌঁছায় না

জাতিসংঘ ও বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ইসরায়েলকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। গাজার ক্ষতবিক্ষত মানুষদের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠানোর তাগিদও দিচ্ছে সবাই। তবে অবরুদ্ধ গাজায় অব্যাহত বোমা বর্ষণের কারণে সেই সহায়তা পৌঁছানোও হয়ে উঠেছে প্রায় অসম্ভব।

 শেষ প্রশ্ন: কত মৃত্যু হলে থামবে আগ্রাসন?

এই প্রশ্ন এখন শুধু ফিলিস্তিনিদের নয়, পুরো মানবজাতির। গাজার প্রতিটি রক্তাক্ত শিশু, পুড়ে যাওয়া মায়ের কান্না আর ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘরবাড়ি যেন মানবতাকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়—এটাই কি সভ্যতার চিত্র?

Комментариев нет