close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় হাসপাতাল পরিচালক নিহত

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
গাজায় নিজ বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন ইন্দোনেশীয় হাসপাতালের পরিচালক চিকিৎসক মারওয়ান। পরিবারও হতাহত। চিকিৎসকদের ওপর বর্বর হামলায় ক্ষুব্ধ গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।..

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলার নিষ্ঠুরতা এবার আরও এক মর্মান্তিক পরিণতি ডেকে আনল। ইসরায়েলি বাহিনীর ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রে নিজ বাড়িতে শহীদ হলেন ইন্দোনেশীয় হাসপাতালের পরিচালক, খ্যাতিমান ফিলিস্তিনি চিকিৎসক মারওয়ান সুলতান।
এ হামলায় শুধু তিনি নন, একইসাথে প্রাণ হারিয়েছেন তাঁর পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য।

গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে, মারওয়ান সুলতান গাজা সিটির নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন, যখন তাঁর ঘর লক্ষ্য করে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে।
চিকিৎসা পেশায় নিবেদিতপ্রাণ এই মানুষটি মানবিকতার এক উজ্জ্বল প্রতীক ছিলেন। তাঁর মৃত্যু গাজাবাসীর জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানায়, “ডা. মারওয়ান ছিলেন সহমর্মিতা ও সেবার জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। তাঁর মতো চিকিৎসক হারানো মানে যুদ্ধের মধ্যে আরও এক আশ্রয় হারানো।”
চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে এমন জঘন্য হামলা শুধু অমানবিকই নয়, তা আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের সরাসরি উদাহরণ বলেও মন্তব্য করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।

নিহত চিকিৎসকের মেয়ে লুবনা আল-সুলতান জানান, “একটি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি বাবার ঘরে এসে আঘাত হানে। তিনি তখন ঘরেই ছিলেন।
তিনি রাজনীতি করতেন না, শুধু যুদ্ধের মাঝেও অসুস্থ মানুষের সেবা নিয়ে ভাবতেন। মানুষ বাঁচানোই ছিল তাঁর একমাত্র কাজ।”

এই বক্তব্যের মধ্য দিয়েই ফুটে উঠেছে – চিকিৎসক মারওয়ান কেবল একজন পেশাদার চিকিৎসক ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক যুদ্ধবিধ্বস্ত জাতির ভরসার নাম।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা গাজা সিটির এলাকায় হামাসের একজন “গুরুত্বপূর্ণ” সদস্যকে টার্গেট করে এই হামলা চালিয়েছে।
তবে নিহতদের তালিকায় যেহেতু হাসপাতাল পরিচালক এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন—এতে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে, হামলায় নিরীহ বেসামরিক লোকজনও প্রাণ হারাচ্ছেন।

ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, “হামলায় বেসামরিক হতাহতের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” কিন্তু এমন বক্তব্যে অনেকেই সান্ত্বনা খুঁজে পাচ্ছেন না।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১৩৯ জন।

এদিকে গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিস এলাকায় ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে চিহ্নিত আল-মাওয়াসির এলাকাতেও ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও সংবাদ সংস্থাগুলোর মতে, এই হামলায় কমপক্ষে ৫ জন নিহত এবং আরও কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন।

এ থেকেই স্পষ্ট, যুদ্ধ আর ‘নিরাপদ’ বলে কিছু অবশিষ্ট নেই গাজায়।

যুদ্ধের শুরু থেকেই ইন্দোনেশীয় হাসপাতাল একাধিকবার ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হামলার পরিণতিতে কিছুদিন আগেই গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হাসপাতালটিকে ‘সেবা অযোগ্য’ হিসেবে ঘোষণা দেয়।

এছাড়া জাতিসংঘ জানায়, উত্তর গাজা গভর্নরেটে বর্তমানে কোনো কার্যকর হাসপাতাল অবশিষ্ট নেই।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ, চিকিৎসা দল ও মানবিক সহায়তাকারীদের ওপরও ইসরায়েল নিয়মিত হামলা চালাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তির গুরুতর লঙ্ঘন।

চিকিৎসক মারওয়ানের মৃত্যু গাজাবাসীর জন্য শুধু একজন চিকিৎসক হারানো নয়, এটি এক সহানুভূতিশীল সেবকের হারিয়ে যাওয়ার গল্প।
যুদ্ধ যত তীব্র হচ্ছে, ততই দেখা যাচ্ছে—নিরীহ মানুষের রক্তে রাঙা হচ্ছে গাজা।
বিশ্বের বিবেক এখন প্রশ্নের মুখে—এই অমানবিকতার শেষ কোথায়?
আর কত চিকিৎসক, শিশু, নারী শহীদ হলে থামবে এই ধ্বংসযজ্ঞ?

No comments found