আন্তর্জাতিক জলসীমায় আগুন! গাজামুখী ত্রাণবাহী জাহাজে ড্রোন হানার অভিযোগে উত্তাল বিশ্ব
গাজার দিকে মানবিক সহায়তা নিয়ে রওনা হওয়া একটি জাহাজে ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। শুক্রবার, ২ মে মাল্টার আন্তর্জাতিক জলসীমায় এই হামলার ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।
হামলার শিকার জাহাজটি ছিল “কনসিয়েন্স” নামের একটি মানবিক মিশনের অংশ, যা ফ্রিডম ফ্লোটিলিয়া কোয়ালিশনের উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছিল। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনটি বলছে, জাহাজে ড্রোন দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হয় এবং এতে জাহাজে থাকা সকলে জীবনের ঝুঁকিতে পড়ে যায়।
ভিডিও ফুটেজে ধরা পড়ে ধ্বংসযজ্ঞ
হামলার পরপরই ফ্রিডম ফ্লোটিলিয়া কোয়ালিশন একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে দেখা যায় জাহাজে আগুন লেগে গেছে এবং আতঙ্কিত মানুষজন সাহায্যের জন্য চিৎকার করছে। সংস্থাটি সরাসরি ইসরায়েলের দিকে আঙুল তুলে বলেছে, “এই হামলা একটি যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের জঘন্য উদাহরণ।”
তাদের আরও দাবি, ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে এ ঘটনার জন্য ডাকা হবে এবং আন্তর্জাতিক আদালতে এর জবাবদিহি চাওয়া হবে।
মাল্টার জরুরি পদক্ষেপ ও উদ্ধার অভিযান
মাল্টা সরকারও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তারা জানিয়েছে, ১ মে রাত ১২টার দিকে মেরিটাইম কর্তৃপক্ষ একটি ফোনকল পায়, যেখানে বলা হয় আন্তর্জাতিক জলসীমায় একটি জাহাজে আগুন ধরে গেছে। সেই জাহাজেই ছিল ১২ জন ক্রু এবং ৪ জন বেসামরিক কর্মী। পরে একটি টাগ বোট এবং মাল্টার একটি টহল জাহাজ পাঠিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালানো হয়।
যদিও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়, তবুও উদ্ধার কাজে কিছুটা জটিলতা তৈরি হয়। জাহাজের অনেকেই শুরুতে টাগ বোটে উঠতে রাজি হননি। এরপর কূটনৈতিক আলোচনা ও বার্তা বিনিময়ের মাধ্যমে সবাইকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়।
আন্তর্জাতিক মানবিক আন্দোলনে বাধা?
এই ত্রাণবাহী জাহাজে মোট ৩০ জন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী ছিলেন। তাদের সবাই যুক্ত ছিলেন গাজায় ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে এক প্রতীকী প্রতিরোধ আন্দোলনের সঙ্গে। জাহাজটি গাজায় ঢুকে খাবার, ওষুধ এবং জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছিল। ফ্রিডম ফ্লোটিলিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “আমরা গাজা ঘেরাওয়ের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করতে চেয়েছি, কিন্তু আমাদের শান্তির জবাব এসেছে বোমা দিয়ে।”
ইসরায়েলের নীরবতা আরও সন্দেহজনক?
এ ঘটনার পর এখনও পর্যন্ত ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এ ধরণের হামলা একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল কূটনৈতিক পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে।
আইন লঙ্ঘন ও ভবিষ্যৎ পরিণতি
বহু আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ বলছেন, আন্তর্জাতিক জলসীমায় একটি ত্রাণবাহী বেসামরিক জাহাজে হামলা চালানো সরাসরি “জেনেভা কনভেনশন” লঙ্ঘনের শামিল। এটি শুধু মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ নয়, বরং বৈশ্বিক মানবিক মিশনের প্রতি চ্যালেঞ্জ। এ ঘটনায় জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠনগুলো কঠোর অবস্থান নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গাজা উপত্যকায় বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা মানবিক সংকটের মধ্যে এ ধরণের হামলা বিশ্ব বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে—মানবতার পক্ষ নেয়া কি এখন যুদ্ধের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে? আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব এখন একটাই—এই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত ও দায়ীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা।